জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কারের দাবিতে চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম।
দুই দিনের অচলাবস্থার পর রোববার (২৯ জুন) সন্ধ্যা থেকে কাস্টম হাউসে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাতেই বন্দরের বিভিন্ন গেইট ও বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে কাস্টমস কর্মকর্তারা যোগ দেন। ফলে বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল, শুল্কায়নসহ আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া সচল হওয়ার পথ তৈরি হয়।
এর আগে শনিবার ও রোববার টানা দুই দিন কাস্টমস হাউসে কোনো কাজ না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট তৈরি হয়। রোববার সকালে বন্দরে জমে থাকা কনটেইনারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ হাজার ৭২২ টিইইউস, যা ধারণক্ষমতার কাছাকাছি। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেলিভারি হয়েছিল মাত্র ১৩৯ টিইইউস কনটেইনার।
রপ্তানি কার্যক্রমও বিপর্যস্ত হয়। ডিপোগুলো থেকে কোনো কনটেইনার বন্দরে পাঠানো না যাওয়ায় রোববার রপ্তানিমুখী অন্তত তিনটি কনটেইনারবাহী জাহাজ নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি।
তবে শাটডাউন প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পর পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হয়। কাস্টমস কার্যক্রম পুনরায় চালুর খবর নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম। তিনি বলেন, রপ্তানি চালানের শুল্কায়ন ও বিল দাখিলের কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) থেকে সব কার্যক্রম পুরোদমে চলবে বলে আশা করছি।
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিকদার বলেন, আমরা বন্দরের তিনটি গেইটে পণ্যচালান নিয়ে যাই। কাস্টমস কর্মকর্তারা সব গেইটে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। ২১টি ডিপোর মধ্যে ১৯টি রপ্তানি কার্যক্রমে যুক্ত। এসব ডিপোতে এখনো রপ্তানিযোগ্য ১৪ হাজার ৩৭১ টিইইউস কনটেইনার রয়েছে।
তিনি জানান, প্রতিদিন ২-২.৫ হাজার রপ্তানি কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পাঠানো হয়। আজ কোনো জাহাজ ছাড়েনি, তবে সোমবার পাঁচটি কনটেইনার জাহাজ ছাড়ার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, কাস্টম হাউসের শাটডাউনের কারণে বন্দরের ভেতরে কনটেইনার আনলোডিং, গেইটে যাচাই, ডেলিভারি সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছিল। এখন কর্মকর্তারা যোগদান করেছেন, তাই আমরা দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফেরার আশা করছি।
এর আগে রোববার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। সংগঠনের সভাপতি হাসান মাহমুদ তারেক জানান, সরকার গঠিত ৫ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটিকে তারা স্বাগত জানাচ্ছেন এবং ব্যবসায়ীদের অনুরোধে শাটডাউন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শাটডাউন প্রত্যাহারে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বন্দরে জমে থাকা বিপুল কনটেইনার দ্রুত সরাতে সব পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, সাময়িক স্থবিরতায় রাজস্ব এবং বাণিজ্যচক্রে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।
Leave a Reply