১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে তা পরের নয় মাস পর্যন্ত চলে। স্মরণকালের নির্মমতম এক হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে আসে বাংলার স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এই গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি উঠেছে। সেই দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারাও। “একাত্তরের প্রেরণায় জাগো,জাগাও” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তারুণ্যের সম্মিলনে সাংগঠনিক যাত্রা শুরু করলো ‘আমরা একাত্তর’।
আজ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সকাল সাড়ে দশটায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘আমরা একাত্তর’ এর প্রথম জাতীয় সম্মেলন ২০২৪।‘আমরা একাত্তর’ নামে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনের এই প্রথম জাতীয় সম্মেলনে বক্তারা গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তুলে ধরেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেশের মাটিতে হবে এবং এই জীবদ্দশায় দেখে যেতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি বলে উল্লেখ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগতিক বক্তব্য রাখেন ‘আমরা একাত্তর’ এর প্রধান সমন্বয়কারী বীর মুক্তিযোদ্ধা হিলাল ফয়েজী।
এরপর তিপ্পান্নজন বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে তিপ্পান্নজন তরুণ তুলে দেন সম্মাননা ক্রেস্ট। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা তিপ্পান্নজন তরুণের হাতে ক্রেস্ট ও জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশ গড়ার মহান দায়িত্ব অর্পণ করেন।
সংগঠনের কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক মৃণাল সরকার এর সঞ্চালনায় ‘আমরা একাত্তর’ এর চেয়ারপার্সন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তরুণ প্রজন্মের উজ্জ্বল প্রতিনিধি শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনের পুত্র জাহিদ রেজা নূর, অনুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা, এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, অ্যান্টার্কটিকা বিজয়ী মহুয়া রউফ, আয়রন ম্যান ইমতিয়াজ এলাহীল ও নৃত্যশিল্পী পূজা সেন গুপ্ত।
অনুষ্ঠানে যে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেয়া হয় তাঁরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীর উত্তম), মেজর ওয়াকার (বীর প্রতীক), হারুন হাবিব, এম হামিদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, হাবিবুল আলম (বীর প্রতীক), মফিদুল হক,মেজর রফিক, কাজী কামাল উদ্দিন ইকরাম, জিল্লুর রহমান দুলাল, মকবুল ই এলাহী মসগুল, মোস্তফা আমিন, খায়রুল আহসান খাঁন,আনোয়ার হোসেন, মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মোহাম্মদ শাহ আলম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, প্রদীপ চক্রবর্তী, সোহেল আহমেদ,রুহেল আহাম্মেদ বাবু, এনামুল হক খসরু, ইসমাত কাদির গামা, কার্তিক চ্যাটার্জি, অজয় দাস গুপ্ত, শেখ কবির আহাম্মেদ, ওসমান গনি, পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, মমিনউল্লাহ পাটোয়ারী, ডাঃ আমজাদ হোসেন, আব্দুর রউফ, আব্দুল গনি, রফিকুল ইসলাম, মোঃ নুর উদ্দিন মিন্টু, ডাঃ দিপা ইসলাম, মিজানুর রহমান খাঁন (বীর প্রতীক), মাহবুব এলাহী (বীর প্রতীক), মোজ্জাম্মেল হক (বীর প্রতীক), মোঃ আবুল হায়াত মিয়া, এনামুল হক চৌধুরী খসরু, বোরহান উদ্দিন মিঠু, আবু আকাশ, মোঃ রফিকুল আলম, এম এ সামাদ, ডাঃ ফাউজিয়া মসলেম, দিল আফরোজ দিলু, রোকেয়া কবির, ডা. দীপা ইসলাম, লক্ষ্মী চ্যাটার্জি, নাসিমুন আরা হক মিনু, আনোয়ার জাহিদ, এ এস এম সবুর, আবুল কালাম আজাদ, এনায়েত হোসেন, শ্যামল শিংহ রায়, আব্দুস সামাদ পিন্টু, সাইদুল ইসলাম।
‘আমরা একাত্তর’ এর প্রধান সমন্বয়ক হিলাল ফয়েজী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য তরুণদের দেশ প্রেম, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করা।”
‘আমরা একাত্তর’ এর প্রতিষ্ঠাতা মাহবুব জামান বলেন, আমরা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি, বিজয় এসেছে। আসলে সত্যিকারের বিজয় যেন তারা এনে দিয়েছে। তরুণদের কথা বলছি। ওদের আওয়াজ না উঠলে হয়ত এ মাটিতে কোনো যুদ্ধাপরাধীর বিচার হতো না। দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে পাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য কতটা স্বস্তির তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভাবলাম মুক্তিযুদ্ধের এই বিশালতা, বীরত্ব সবার কাছে পৌঁছাতে চাই। সে জন্যই আমাদের স্লোগান জাগো এবং জাগাও।’
দুপুর দেড়টায় সংগঠনের চেয়ারপার্সন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামানের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত হয়।
মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতির পর দুপুর তিনটায় শুরু হয় দ্বিতীয় অধিবেশন। এই অধিবশনে মূলত সংগঠনের কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামানকে সভাপতি ও হিলাল ফয়েজীকে সাধারণ সম্পাদক করে ‘আমরা একাত্তর’ এর ৬৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটির প্রথম জাতীয় সম্মেলনে এ পরিষদ গঠন করা হয়। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
নবগঠিত কমিটিতে ১১ জন সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রদীপ চক্রবর্তী, মৃণাল সরকার, খন্দকার আজিজুল হক মণি, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের পরিচালক আব্রাহাম লিংকন, শরীফুল ইসলাম জুয়েল, নিয়ামত আলী খোকন, এনামুল আজিজ রুমি, অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী, সাংবাদিক কলিম সারোয়ার, আমজাদ হোসেন সরকার ও রুবেল খান।
Leave a Reply