লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের পরপরই ভারতের আহমেদাবাদ শহরে বিধ্বস্ত হলো এয়ার ইন্ডিয়ার একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হওয়া ফ্লাইট AI171, মেঘানিনগর এলাকার একটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার পরপরই এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আগুন ও ধোঁয়ার কুন্ডলি।
ফ্লাইটটিতে মোট ২৪৪ জন আরোহী ছিলেন, যার মধ্যে ২৩২ জন যাত্রী এবং ১২ জন ক্রু সদস্য। বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের এই বিমানটি উড্ডয়নের মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচের দিকে নেমে আসে এবং একটি চারতলা ভবনের সঙ্গে সংঘর্ষে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ভবনে থাকা বাসিন্দারাও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানটি আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল এবং হঠাৎই দ্রুত গতিতে নিচে নেমে আসে। সংঘর্ষের সঙ্গে সঙ্গেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের কয়েকটি বাড়িতেও। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও এনডিআরএফ দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
তবে ঠিক কতজন নিহত বা আহত হয়েছেন, তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। বিভিন্ন সূত্রে ইঙ্গিত মিলছে, বহু যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকেই দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (DGCA) ইতোমধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারের কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা বার্ড হিটের মতো কোনো পরিস্থিতি এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
এই বিমানটি বোয়িং ড্রিমলাইনার সিরিজের অন্তর্ভুক্ত এবং এর আগ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো দুর্ঘটনার রেকর্ড ছিল না। এ ঘটনার পর ভারত ও আন্তর্জাতিক মহলে বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে শহরের সিভিল হসপিটাল ও প্রাইভেট নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে এবং জনসাধারণকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে এবং নিহত ও আহতদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা চলছে।
এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চলমান রয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Leave a Reply