পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে অন্তত ৫০০ জনে পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে আহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও টেলিভিশন আফগানিস্তান (আরটিএ) এই তথ্য জানিয়েছে।
দেশটির তালেবান সরকারের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, শুধুমাত্র কুনার প্রদেশেই ‘শত শত মানুষ’ নিহত হতে পারে। পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিখটার স্কেলে ছয় মাত্রার এই ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে অসংখ্য গ্রাম। আফগানিস্তানের স্থানীয় কর্মকর্তারা বিবিসিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নানগারহার ও কুনার প্রদেশে ভূমিকম্পের কারণে আহত ১১৫ জনের বেশি মানুষকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৮ কিলোমিটার গভীরে। এরপর থেকে অন্তত আরও তিনটি কম্পন হয়েছে। সেগুলোর মাত্রা ছিল চার দশমিক পাঁচ থেকে পাঁচ দশমিক দুই এর মধ্যে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বেশ কয়েক সেকেন্ড কম্পন টের পাওয়া যায়। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
দেশটির তালেবান সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডজনখানেক ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা মানবিক সংস্থাগুলোকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এসব এলাকার বেশ কিছু স্থানে ভূমিধস ও বন্যার কারণে আকাশপথ ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে সেখানে পৌঁছাতে পারছে না উদ্ধারকর্মীরা।
আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে
এই ভূমিকম্পের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থান থেকে আহতদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই আহতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। উদ্ধারকাজে যুক্ত তালেবান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং শুধু এই একটি উপত্যকাতেই ‘শত শত মানুষ’ নিহত বা আহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা কুনার প্রদেশ। কেননা, ভূমিধসের কারণে সড়কপথ বন্ধ হয়ে গেছে।
কুনার প্রদেশের অন্তত দুইটি সূত্র বিবিসি সংবাদদাতাকে জানিয়েছে, সোমবার সকালে কুনারের মাজার উপত্যকায় অন্তত চারটি হেলিকপ্টার পৌঁছেছে, যেগুলোতে চিকিৎসাকর্মী ছিলেন।
চিকিৎসক ও উদ্ধার কর্মীরা, প্রথমে আহতদের চিকিৎসার চেষ্টা করছেন। আর গুরুতর আহতদের রাজধানী কাবুল বা কাছাকাছি হাসপাতালে হেলিকপ্টারে করে নেওয়া হচ্ছে বলে সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ধ্বংসযজ্ঞের পরিমাণ বিবেচনা করে কর্মকর্তারা বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে আরও অনেক সহায়তার প্রয়োজন হবে। নানগারহার প্রদেশে ভূমিকম্পে আহতদের রক্ত দিতে হাসপাতালগুলোতে ছুটছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এখন পর্যন্ত কয়েক ডজন ব্যক্তি হাসপাতালে পৌঁছেছেন রক্ত দিতে। ওই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তালেবান সরকারের ডেপুটি গভর্নর আজিজুল্লাহ মুস্তাফা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তার আওতাধীন জেলায় প্রায় ৩০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
নানগারহার ও কুনারের কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, দুই প্রদেশে মোট ১১৫ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানের এই দুই প্রদেশই পাকিস্তান সীমান্তবর্তী। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নানগারহার প্রদেশের রাজধানী জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে। জালালাবাদ আফগানিস্তানের পঞ্চম বৃহত্তম শহর।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এর আগে শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত নানগারহার প্রদেশে বন্যা হয়েছিল। এতে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পাঁচজন নিহত হয়।