অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম, অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টার (AMWC) গত ৯ মার্চ (রোববার) রাতে সিডনির মিন্টুস্থ ইনডোর স্পোর্টস সেন্টারে তাদের বার্ষিক ইফতার পার্টি আয়োজন করে। এই আয়োজনটি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে প্রায় আড়াই হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান একত্রিত হয়ে পবিত্র রমজান মাসের বরকত লাভের জন্য ইফতার করেন। সিডনির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করেন, যা প্রমাণ করে ধর্মীয় মিলন ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় এই আয়োজনের গুরুত্ব কতটা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সভাপতি ড. আনিসুল আফসারের সভাপতিত্বে। তিনি তার বক্তব্যে মুসলমানদের ঐক্য, পারস্পরিক সহানুভূতি এবং সমাজে একসাথে কাজ করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। ড. আফসার উল্লেখ করেন, “এ ধরনের আয়োজন আমাদেরকে একত্রিত করে, আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা এবং সহানুভূতি তৈরি করে। পবিত্র রমজান আমাদের সেই মুহূর্তে প্রেরণা দেয়, যখন আমরা একে অপরকে সাহায্য করি এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করি।”

এছাড়া, এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খতিব হাফেজ আবদুল হাদী তানভীর, যিনি পবিত্র রমজান মাসের তাৎপর্য নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “রমজান আমাদের আত্মবিশ্লেষণ এবং আত্মশুদ্ধির একটি সময়, যখন আমরা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য নিজেদের পরিশুদ্ধ করি এবং একে অপরের সাহায্যে সম্মিলিতভাবে সমাজের উন্নতি সাধন করি।” তিনি মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ এবং বিশ্বশান্তির জন্য বিশেষ দোয়া করেন, যা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।

সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান খান মুন তার বক্তব্যে উপস্থিত সবাইকে সংগঠনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “আমরা একসাথে কাজ করলে আমাদের সংগঠন আরও শক্তিশালী এবং কার্যকরী হয়ে উঠবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হল সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণে কাজ করা।” তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানান, যাতে সংগঠনটি আরও বেশী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

এছাড়া, এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের মেয়র ডারসি লাউন্ড ও অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিরা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, “আজকের এই আয়োজন আমাদের সমাজে একতা ও শান্তির বার্তা পৌঁছায়। আমরা সবাই একে অপরের সাথে সহানুভূতিশীল ও সম্মানজনক মনোভাব নিয়ে কাজ করি, তখনই আমাদের সমাজ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।”

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী, কাউন্সিলর ইব্রাহিম খলিল মাসুদ, কাউন্সিলর আশিকুর রহমান, কাউন্সিলর মিসেস এলিজা আজাদ রহমান টুম্পা সহ আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি। তারা সবাই এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে, মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নতি এবং সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

এই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল এর সামগ্রিক পরিবেশ। সিডনির বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানরা একে অপরের সঙ্গে আড্ডা জমিয়ে ইফতার করেন এবং একই সাথে ঐতিহাসিক রমজান মাসের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করেন। প্রায় ২৫০০ মানুষ এতে অংশ নেন, যা প্রদর্শন করে যে, সিডনি শহরের মুসলিম সমাজে এমন আয়োজনগুলোর প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ও সমর্থন রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টারের এই বার্ষিক ইফতার মাহফিল সিডনির মুসলিম সম্প্রদায়কে একত্রিত করেছে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই ধরনের অনুষ্ঠান মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় বন্ধন আরও দৃঢ় করেছে এবং তাদের মধ্যে একতা, সহযোগিতা এবং ভ্রাতৃত্বের অনুভূতি তৈরি করেছে।