বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন

পেঁয়াজ ছাড়া তেলঝোল রেসিপি

কবিতা রায়
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ২১৮ Time View

ক’দিন ধরে পেঁয়াজ এর মূল্য বৃদ্ধির উর্দ্ধগতিতে আমজনতার নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছে!
কর্তাদের কড়া নির্দেশ রান্নায় পেঁয়াজের মাত্রা কমাও…..
তারা তো বলেই খালাস কিন্তু তরকারির স্বাদের তারতম্যহীনতার দায়ভার একক ভাবে বর্তায় রাঁধুনির ঘাড়ে!!
চুক বেচুক ঘটলে বিদ্রুপের বেত্রাঘাতে এতটুকু ছার পড়েনা মোটেও….
আমাদের দেশে অঞ্চল ও সমাজ ভেদে রয়েছে রন্ধন প্রণালীরও প্রকারভেদ….
কিছু মানুষ বা পরিবার আছে যারা পেঁয়াজ ছাড়া রান্না হয় বা করা যায় তা কল্পনাও করতে পারে না।
আবার কিছু পরিবার আছে যাদের পাকশালে পেঁয়াজের প্রবেশাধিকার একেবারেই নিষিদ্ধ।
পেঁয়াজ খাওয়া তাদের কাছে অভক্ষ ভক্ষন!
পেঁয়াজ যুক্ত রান্না তারা অস্পৃশ্য জ্ঞান করেন….
কিছু মানুষ আছে যাদের পরিবারে বিশেষ বিশেষ দিনে নিরামিষ রান্না খাওয়ার নিয়ম, সেদিন পেঁয়াজের ব্যবহার পুরোপুরি বয়কট করা হয় …..
এমন কিছু পরিবার আছে যারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সব্জি রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার না করাটা মেনে নিলেও পেঁয়াজহীন মাছের পদ শিবহীন যজ্ঞের আওতায় ফেলবে নির্দ্বিধায় !
এমন পরিবারও আছে যেখানে মাছের গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও পেঁয়াজ – রসুন প্রকটভাবে বর্জনীয় !
পেঁয়াজ তাদের কাছে মাছ মাংসের চেয়েও বড় আমিষ এবং সেটাই বিশ্বাস করে…..
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কিছু কিছু দেব দেবীকে মাছ মাংসের ভোগ দেওয়ার প্রথা থাকলেও তা পেঁয়াজ রসুন ছাড়া রান্না করা হয় এবং তাহাই নিয়ম সিদ্ধ …
তবে অঞ্চল ও পরিবার ভেদে রান্নার ভিন্নতা রয়েছে….
ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে একটা মজার ঘটনার সন্মূখীন হতে হতো কদাচিত….
তা হচ্ছে দুই দলের মধ্যে পার্টনার ভাগাভাগিতে কোন একজন বেশী হলে তাকে দুই দলে খেলার সুযোগ করে দেওয়া হতো, আঞ্চলিক ভাষায় তাকে বলা হতো বেগুন লচপচ অর্থাৎ আমরা সেই বেগুন লচপচ পর্যায়ের!
সব্জি -মাছ দু’টোতেই যেমন পেঁয়াজ দেই তেমনি আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনটাতেই পেঁয়াজ লাগেনা/ দেইনা….
যেমন মুসুর ডাল ব্যতীত অন্য কোন ডালেই সচারাচর পেঁয়াজ দেইনা আবার কোন কোন সময় পেঁয়াজ ছাড়াও রান্না করি!
বেশির ভাগ সময় সব্জি রান্না করা হয় পেঁয়াজ ছাড়া যেমন আলু- ফুলকপি/ আলু-পটলের ডালনা, পাঁচ মিশলি তরকারি, ধোকার ডালনা, মোচার ঘন্ট, কাঁচা কলার কোপ্তাকারী ইত্যাদি।
আবার আলুর দম দুভাবেই করা যায়!
শাকের ব্যাপারেও তাই….
মাছ তো প্রায়ই পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করি আমি, বিশেষ করে আলু ফুলকপি দিয়ে মাছের ঝোলে কখনো পেঁয়াজ ব্যবহার করিনা তাতে আমার মনে হয় ফুলকপির স্বাদ – গন্ধ বিনষ্ট হয়!
কেউ কেউ বলে ইলিশ মাছ নাকি পেঁয়াজ ছাড়া ভাবা যায় না!
আমার কাছে তো শুধু জিরা বাটা – কাঁচা মরিচ দিয়ে ইলিশ মাছের পাতলা ঝোল সবচেয়ে উপাদেয় মনে হয়, আর ইলিশ ভাপা / সর্ষে ইলিশ অনবদ্য!
পেঁয়াজ দিয়ে থকথকে কাদার মত ঘন ঝোলের চেয়ে কম মসলার রান্না বেশি স্বাদের ও উপাদেয় অন্তত প্রাত্যহিক জীবনে!
আজকের রান্নাটি একদম কম মসলা ও পেঁয়াজ ছাড়া।
এটা এখানে বাটা মাছ বললেও আসল নাম পার্শে।
ওপার বাংলা ও সাতক্ষীরা – যশোর জেলায় এই মাছের খুব কদর!
কোলকাতায় প্রথম খেয়েছিলাম, ওখান থেকেই শেখা রেসিপি….
তেলঝোল নামে পরিচিত…..
প্রথমে নুন হলুদ দিয়ে মাখিয়ে হালকা ভেজে তুলে নিতে হবে।
তৈলাক্ত বলে ভাজার সময় বেশ তেল বের হয় তাই ঐ তেলেই সামান্য কালোজিরা শুকনা মরিচ ফোঁড়ন দিয়ে তাতে বাটিতে গুলে রাখা জিরা- মরিচ- হলুদ বাঁটা / গুঁড়ার মিশ্রণ ঢেলে দিয়ে নেড়ে কয়েক টুকরো টমেটো কুচি দিয়ে স্বাদমতো নুন দিয়ে কসিয়ে পরিমাণ মত গরম জল দিয়ে ফুটিয়ে এবার মাছ ছেড়ে দিয়ে ঢেকে দিন।
একটু পর সামান্য ধনে পাতা কুচি ও দু তিনটা কাঁচা মরিচ চিরা ছড়িয়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে নিন।
এভাবে দেশী বাটা, পাবদা, ট্যাংরা এমনকি রুই- কাতলা মাছের পাতলা ঝোলও ভালো লাগে।
সেক্ষেত্রে নামানোর আগে কিছুটা জিরা ভাজার গুঁড়া ছড়িয়ে দিলে ভালো হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category