অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকতে বন্দুকধারীদের এলোপাতাড়ি গোলাগুলির ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৬ জনে। গুরুত্বর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন পুলিশসহ আরও ৪০ জন।
পুলিশের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মাঝে একজন শিশুসহ দুই পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
এছাড়া ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানতে লোকজনের ফোন করার সুবিধার্থে একটি জরুরী হটলাইন সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে এক বন্দুকধারী নিহত হয়েছেন। আরেকজনকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। আটককৃত সন্দেহভাজন ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানানো হয়।
এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা করেছেন নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ কমিশনার ম্যাল ল্যানিয়ন।
বিবিসির প্রতিবেদনা বলা হয়, ঘটনার সময় ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা মূলত হানুক্কা উৎসবের প্রথম প্রদীপ জ্বালাতে সৈকতে জড়ো হচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ৩০ বছর বয়সী হ্যারি উইলসন সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে বলেন, ‘আমি অন্তত ১০ জনকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি, চারদিকে ছিল শুধু রক্ত আর রক্ত।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, গুলির শব্দে সৈকতে ও পার্কে থাকা মানুষজন দিগ্বিদিগ জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটছেন। একটি ভিডিওতে কালো শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে বড় কোনো অস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়। পরে সাদা টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি তাকে জাপটে ধরে অস্ত্র কেড়ে নেন।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ দুজন ব্যক্তিকে মাটিতে চেপে ধরেছে এবং একজনকে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ঘটনাটিকে মর্মান্তিক ও পীড়াদায়ক উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন ‘“এই হামলা সন্ত্রাসী, ইহুদিবিদ্বেষী অশুভ তৎপরতা। আমাদের জাতির জন্য এ এক অন্ধকার মুহূর্ত। আমাদের পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যে কাউকে শনাক্ত করতে কাজ করছে।”
অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণত বন্দুক হামলার ঘটনা খুব কম ঘটে। এর প্রধান কারণ মূলত ১৯৯৬ সালের পোর্ট আর্থার গণহত্যার পর প্রণীত জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র চুক্তি যা বিশ্বের কঠোরতম বন্দুক আইন হিসেবে পরিচিত।
১৯৯৬ সালে তাসমানিয়ার পোর্ট আর্থারে এক বন্দুকধারীর গুলিতে ৩৫ জন নিহত হওয়ার পর, তৎকালীন সরকার আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল এবং পাম্প-অ্যাকশন শটগান নিষিদ্ধ করে এবং একটি বাধ্যতামূলক বন্দুক বাইব্যাক কর্মসূচি চালু করে, যার মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ ও ধ্বংস করা হয়।
এই আইনের ফলে পরবর্তী দুই দশকে অস্ট্রেলিয়ায় কোনো গণ-বন্দুক হামলা এবং আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
এই সাম্প্রতিক হামলাটি গত তিন দশকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাগুলির একটি এবং এটি দেশের কঠোর বন্দুক আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।