বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন

সিডনিতে উৎসবমুখর আয়োজনে উদযাপিত হলো চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘মেজবান’

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৭ Time View

৯ নভেম্বর রবিবার, সিডনির ফেয়ারফিল্ড শো গ্রাউন্ড যেন সকাল থেকেই পরিণত হয়েছিল ছোট্ট এক চট্টগ্রামে। প্রবাসী চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আয়োজন “মেজবান’। বৃহত্তর চট্টগ্রাম সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।

চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ভোজের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল আসল স্বাদ ও সেই ঘ্রাণ। বাংলাদেশ থেকে বিশেষভাবে আনা হয় অভিজ্ঞ বাবুর্চি হাজী আবুল হোসেনকে, যিনি মধ্যরাত থেকেই রান্নায় ব্যস্ত ছিলেন তাঁর টিমসহ। বিশাল চুলা, হাঁড়ি আর ধোঁয়ার ভেতর জ্বলজ্বলে মুখগুলো যেন এক প্রাণচঞ্চল গ্রামের রান্নাঘরের চিত্র এঁকে দিচ্ছিল প্রবাসে।

দুপুর নাগাদ শো গ্রাউন্ডে জমে ওঠে অতিথিদের ভিড়। সুশৃঙ্খল টেবিল-চেয়ার সাজানো, হাসিমুখে স্বেচ্ছাসেবকদের পরিবেশন সব মিলিয়ে যেন উৎসবের এক প্রশান্ত ছন্দ। সাদা ভাত, ঝাল গরুর মাংস, বুটের ডালে খাসির মাংস আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ছিলো ঝাল খাসির মাংস, মিষ্টি জর্দা এই মেন্যুতে সবাই খুঁজে পান আপন ঘরের স্বাদ। বিকেলে লাইন ধরে ঘন মালাই চা ও ‘বেলা’ বিস্কুট খাওয়ার আনন্দে উৎসবের রঙ হয় আরও গভীর।

অতিথিদের অনেকে বলছিলেন, “এত বড় আয়োজন এত নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা সত্যিই প্রশংসনীয়। মনে হচ্ছিল, চট্টগ্রামের কোনো পাড়া-মহল্লার মেজবানে বসে আছি।” শুধু চট্টগ্রামবাসীই নন, সিডনির বিভিন্ন শহর ও সম্প্রদায়ের মানুষও এসেছিলেন উৎসব ভাগ করে নিতে। মেলবোর্ন, ক্যানবেরা, ব্রিসবেন থেকেও ছিল অতিথিদের উপস্থিতি।

দিনজুড়ে মঞ্চে চলেছে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । বিকেলে মঞ্চে উঠে সিডনি প্রবাসী গীতিকার আবদুল্লাহ আল মামুন দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করেন নিজের গানের গল্প, পরে যোগ দেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পী ও রেনেসাঁ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা নকীব খান। তাঁর ও তাঁর ব‍্যান্ডের জনপ্রিয় গান গুলো গেয়ে শোনান তিনি ।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কণ্ঠশিল্পী আদিলা নূরও গান শোনান স্নিগ্ধ আবেগে, যা বিকেলের আলোয় ছড়িয়ে দেয় এক প্রশান্ত সৌন্দর্য। সংগীত, হাসি আর করতালির মিশ্রণে শো গ্রাউন্ড তখন হয়ে ওঠে প্রবাস জীবনের সবচেয়ে আপন সময়ের প্রতীক।

এই আয়োজন শুধু খাবারের নয় এটি ছিল প্রবাসে থেকেও শিকড়ের কাছে ফিরে যাওয়ার এক সামাজিক উল্লাস। দিনের শেষে ফেয়ারফিল্ডের আকাশে যখন সন্ধ্যার রঙ ঢলে পড়ছিল, অনেকের চোখে ঝিলিক দিচ্ছিল সন্তুষ্টি আর গর্বের আলো।

একজন বয়োজ্যেষ্ঠ অতিথি মন্তব্য করলেন,”মেজবান আমাদের কেবল স্মৃতি দেয় না, এটা আমাদের একত্র করে, আমাদের মাটির টান মনে করিয়ে দেয়।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category