প্রবাসী বাঙালিদের প্রাণের উৎসবে পরিণত হলো শঙ্খনাদ ইনক আয়োজিত শারদ মেলা। মহালয়ার আবহে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তির বৈচিত্র্যময় আয়োজন হয়ে উঠল সিডনির বাঙালি সমাজের এক বিরল সাংস্কৃতিক আসর।
গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ইঙ্গেলবার্নের গ্রেগ পারসিভাল হলে অনুষ্ঠিত এই দিনব্যাপী মেলায় ভিড় জমায় শতাধিক প্রবাসী বাঙালি পরিবার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিমেল হোরে ও অনুপম দেবের সঞ্চালনায় সম্মিলিত পরিবেশনা মঞ্চস্থ হয়। অনুপম দেবের মন্ত্রপাঠের সঙ্গে ভক্তিমূলক সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের মহালয়ার ভোরের আবহে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। প্রথম পর্বে তিনটি কোরাস ও তিনটি নৃত্য পরিবেশন করে স্থানীয় শিল্পীরা, যা উপস্থিত দর্শকদের আবেগাপ্লুত করে।
মেলায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেল এমপি ডেভিড মনক্রিফ, ক্যাম্বলটাউন সিটি কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী, ইব্রাহিম খলিল মাসুদ ও আশিকুর রহমান।
শিশু শিল্পীদের পরিবেশনা দর্শকদের বিশেষভাবে মুগ্ধ করে। “নমো চণ্ডী” নৃত্যে লিবনির অনবদ্য পরিবেশনা ও রেমোর শ্লোকপাঠ সাড়া জাগায়। একক সংগীতে স্বপ্না চক্রবর্তী পরিবেশন করেন “ধরণীর ও বর”। ধারাবাহিকভাবে বাঁধনের কণ্ঠে “তোমার মোহনো রূপে” ও “আজিকে বাজে মনের মাঝে”, সুমন বর্ধন ও পার্থর দলীয় গান, পূর্ণতা কুণ্ডুর একক পরিবেশনা, শ্রেয়সী দাসের নৃত্য, রঞ্জিত দাস ও সৌমিক ঘোষের গান দর্শকদের মাতিয়ে তোলে।
শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন—কণ্ঠশিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী, অদিতি মিত্র, মৌমিতা দেব, সুবর্ণা তালুকদার, নামি দে চৌধুরী, অরুণা কিশোর দাস, মিতা দে, পূর্ণতা কুণ্ডু, হৈমন্তী, বাঁধন, রঞ্জিত দাস, সৌমিক ঘোষ, সুমন বর্ধন ও পার্থ। নৃত্যে অংশ নেন শ্রেয়সী দাস ও সুরমিতা সিনহা। শিশু শিল্পীদের মধ্যে লিবনি, আর্শিয়া, অর্ষিতা, মৌরি, রেমো, রাপ্তি ও আরিশ দর্শকপ্রিয় পরিবেশনা উপহার দেয়। তবলায় সঙ্গত দেন কামনাশীষ চৌধুরী।
মেলার বিশেষ আকর্ষণ ছিল চারজন গুণীজনকে শারদ সম্মাননা প্রদান। কমিউনিটিতে দীর্ঘদিনের অবদান রাখায় এ সম্মাননায় ভূষিত হন সাবেক কাউন্সিলর প্রবীর মৈত্র, লেখক ও কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্ত, কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী ও চিকিৎসক ড. সমীর সরকার।
শঙ্খনাদের এই শারদ মেলা প্রমাণ করল—প্রবাস জীবনে থেকেও ধর্মীয় আবেগ, সংস্কৃতি ও সামাজিক বন্ধনের মেলবন্ধন বাঙালিদের হৃদয়ে এখনো সমান শক্তিতে প্রবাহিত। মহালয়ার আবহে সেই বন্ধনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করল সিডনির প্রবাসী সমাজ।