শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন

সুপার ফোরে জয়ে উড়লো বাংলাদেশ

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ২৭ Time View
স্বপ্নের মতো শুরু। ঠিক তাই, ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত দাপটে শ্রীলঙ্কাকে চমকে দিল বাংলাদেশ। তাদের হাত ধরেই দল পেয়েছিল সুপার ফোরের টিকিট। তাদেরই কীনা আজ হারিয়ে দিল লিটন দাসের দল। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দারুণ সূচনা করল বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে সেরা ছন্দে থাকা টাইগাররা নিজেদের ঐতিহাসিক পারফরম্যান্স দিয়ে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে তুলে নিয়েছে একটি স্মরণীয় জয়।
দুবাইয়ের গরম সন্ধ্যায় ক্রমশ তীব্র হয় উত্তেজনা, পিচে ঝড় তুলেছিল দুই দলের লড়াই। শ্রীলঙ্কার কঠিন বোলিং ও দাসুন শানাকার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের তরুণ টাইগাররা। শেষ ওভারে ছিল মাত্র ৫ রান প্রয়োজন, হাতে চার উইকেট। তখন মাঠে ফুটে উঠল ক্রিকেটের এক অন্যরকম নাটক-উত্তেজনা, টানটান সংগ্রাম আর অবিশ্বাস্য এক জয়গাথা।

সাইফ হাসান ও তাওহীদ হৃদয়ের ঝড়ো ব্যাটিং, মুস্তাফিজের মায়াজালে বাঁধা লঙ্কানরা, আর শেষ বলে নাসুম আহমেদের জয়ের রান, সব মিলিয়ে এটাই ছিল সেই সন্ধ্যা, যখন বাংলাদেশের ক্রিকেট জয়লাভের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল।

এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানকে হারিয়ে সুপার ফোরে উঠেছিল বাংলাদেশ। আর সেই টুর্নামেন্টেই আবার মুখোমুখি হয় লঙ্কানদের, যারা কিনা গ্রুপ পর্বেই বাংলাদেশকে পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছিল। তবে এবার করুণ পরিণতির শিকার হল তারা।

লিটন দাস টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। লঙ্কান ওপেনার নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিসের ঝড়ো সূচনায় প্রথম ৫ ওভারে স্কোরবোর্ডে জমে ৪৪ রান। তবে এর পর থেকেই ধীরে ধীরে ছন্দ হারাতে থাকে শ্রীলঙ্কা। শেখ মেহেদী ও মুস্তাফিজের ঘূর্ণি আর পেসের মিশেলে ধুঁকতে থাকে লঙ্কান ব্যাটিং।

মুস্তাফিজ ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে তুলে নেন ৩ উইকেট। মেহেদীও ছিলেন কার্যকরী, নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। তবে ইনিংসটা টেনেছেন শানাকা, যিনি ৩৭ বলে ৬৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে দলকে এনে দেন ১৬৮ রানের সম্মানজনক পুঁজি।

১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই শূন্য রানে ফিরেন তানজিদ হাসান তামিম। তবে সাইফ হাসান ও লিটন দাস সেই ধাক্কা সামলে দলকে এনে দেন ৫০ রানের জুটি। ২৩ রান করে লিটন বিদায় নিলেও সাইফ থেমে থাকেননি। ঝড়ো মেজাজে ৪৫ বলে ৬১ রান করে তুলে নেন নিজের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস।

তার বিদায়ের পর দায়িত্ব নেন তাওহীদ হৃদয়। সমালোচনার জবাব দিয়ে ৩৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে তিনি জয়ের পথ সহজ করেন। ম্যাচ যখন একেবারেই বাংলাদেশের হাতে, তখন হঠাৎ করে উত্তেজনা তৈরি হয় শেষ ওভারে। দরকার ছিল ৬ বলে মাত্র ৫ রান। কিন্তু শানাকার ওভারে পরপর দুই উইকেট পড়ে গেলে নাটকীয়তা তৈরি হয়।

জাকের আলী চার মেরে চাপ কমালেও বোল্ড হয়ে যান দ্বিতীয় বলে। এরপর মেহেদী হাসান ক্যাচ তুলে দেন। পাঁচ বলে দুই উইকেট হারিয়ে শেষ ওভারে ১ রান যখন স্বপ্নের মতো কঠিন হয়ে ওঠে, তখন নাসুম আহমেদ ধীরস্থিরভাবে শর্ট থার্ডম্যানে বল ঠেলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ১ বল হাতে রেখে।

এটি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে পাওয়া জয়। এর আগে ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে ২১৫ রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ, সেটিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

এই ম্যাচে সাইফ ও হৃদয়ের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মুস্তাফিজের বোলিংও ছিল অসাধারণ। ফিল্ডিংয়ে কিছু ক্যাচ ফসকে গেলেও দলগতভাবে পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়। শানাকার ইনিংসটি কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেললেও শেষ পর্যন্ত আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তায় জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা।

এই জয়ে পূর্ণ ২ পয়েন্ট নিয়ে সুপার ফোরে দুর্দান্ত শুরু করল বাংলাদেশ। এবার সামনে ভারত-পাকিস্তানের মতো দুই পরাশক্তি!

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category