বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন

সিডনিতে ‘ফাগুন হাওয়া ফেস্ট ২০২৫’-এর জাঁকজমকপূর্ণ দশম বর্ষপূর্তি উদযাপন

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫
  • ৯০৯ Time View

গত ২৫ মে ২০২৫ রবিবার বাংলাদেশি সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ এবং প্রবাসী কমিউনিটির ঐক্যের এক অনন্য নিদর্শন ‘ফাগুন হাওয়া ফেস্ট ২০২৫’ উদযাপিত হলো সিডনির মিন্টো ইনডোর স্টেডিয়ামে । এবারের উৎসবটি ছিল দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান , যা ছিল আরও বিস্তৃত, রঙিন এবং প্রাণবন্ত।

অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল ২টায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে, যা পরিবেশন করেন শায়ান ইয়াসার জামান। এরপর পরিবেশিত হয় অস্ট্রেলিয়ার ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। পুরো আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন শুভজিৎ ভৌমিক।

শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অংশ। শিশুদের সংগঠন ‘কিশলয় কচিকাঁচার এর শিল্পীরা পরিবেশন করে গান এবং দলটির পরিচালনায় ছিলেন রোকসানা বেগম। একক সংগীত পরিবেশন করে খুদে শিল্পী শায়ান ইসার জামান।

এরপর একে একে মঞ্চে আসেন সিডনির জনপ্রিয় শিল্পীরা। গান পরিবেশন করেন মোস্তাফিজুর খান রানা, মামুন ভূঁইয়া, ইমরান হোসেন এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক দল ‘চারু’-র শিল্পীরা। এই দলে ছিলেন আয়েশা কলি, নামিদ ফারহান, সালাউদ্দিন শিপলু, লিন্টাস প্যারাডা, তাপস কর এবং সুহৃদ সোহান হক।

কবিতা আবৃত্তি করেন মুনা মুস্তফা। পরিবেশিত হয় নেপালি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। একক নৃত্যে মাতিয়ে তোলেন আদৃতা আকাশ, আর যুগল নৃত্যে অংশ নেন ঋতশ্রী ও পলাশ বিশ্বাস।

দশম বর্ষপূর্তির বিশেষ আয়োজনে অতিথিদের স্বাগত জানান হেমা রেজওয়ান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ফাগুন হাওয়া ইনক-এর সভাপতি তিশা তানিয়া, সাজেদা আক্তারে সানজিদা এবং নাজমুল হক।

বিশেষ অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মার্ক কুরি, সংসদ সদস্য, ডেভিড মনক্রীফ নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য, ক‍্যাম্পবেলটাউন সিটি কাউন্সিল মেয়র ডার্সি লাউন্ড,ডেপুটি মেয়র ক্যারেন হান্ট, কাউন্সিলর মাসুদ খলিল
কাউন্সিলর আশিকুর রহমান অ্যাশ।
এছাড়াও স্থানীয় কমিউনিটির গন‍্যমান‍্য নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আরো উপস্থিত ছিলেন সংবাদ ও মিডিয়া কর্মীরাও।

অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকদের (স্পন্সর) ও আয়োজকদের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। ফাগুন হাওয়ার দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রবীণ কমিউনিটি নেতা গামা আব্দুল কাদিরকে এবং বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় লরেন্স ব্যারেলকে, যিনি ফাগুন হাওয়ার মূল পরিচিতি লোগোটি ডিজাইন করেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল দুটি পোশাক প্রদর্শনী: কাস্ট ক্রিয়েশন বুটিকস-এর পোশাকে একটি ফ্যাশন প্রদর্শনী পরিচালনা করেন সাজেদা আফরোজ জেনি। সাজসজ্জা ও নৃত্য পরিকল্পনা (নৃত্য নির্দেশনা) করেন ঋতশ্রী বিশ্বাস। এতে অংশগ্রহণ করেন রিট্‌জ রানওয়ে দল।ও ঢাকা পাঞ্জাবি-এর আয়োজনে আরেকটি আকর্ষণীয় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়, যার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মোস্তাকিম মোর্শেদ এবং নৃত্য নির্দেশনায় ছিলেন রিফাত আনিকা।

এছাড়াও, ক্র্যাটোস সাসটেইনেবিলিটি-এর সৌজন্যে অনুষ্ঠিত হয় রঙিন বেলুন র‍্যাফেল ড্র, যেখানে দর্শকদের মাঝে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

সঙ্গীত পরিবেশনায় দর্শকদের হৃদয় জয় করেন লামিয়া ইসলাম অনন্যা, যার পরিবেশিত আধুনিক বাংলা ও লোকগান গান ছিল দর্শকপ্রিয় একটি অংশ।

উৎসবের আবেগঘন পরিণতিতে মঞ্চে উঠে আসেন বাংলাদেশ থেকে আগত জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস। তাঁর প্রাণবন্ত পরিবেশনা ছিল উৎসবের মূল আকর্ষণ। খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে ছিলেন মিউজিশিয়ান সোহেল খান (গিটার), নীলাদ্রী (কী-বোর্ড), তানভীর হাওলাদার (বেইজ গিটার), শাহরিয়ার জামাল (ড্রামস), লিন্টাস পেরেরা (ঢোল)।
তাঁর পরিবেশনায় অভিনয়ে অংশ নেন জুঁই চৌধুরী ও কাকলী, যাঁরা গানের আবেগকে দৃশ্যরূপে ফুটিয়ে তোলেন।
এছাড়াও উৎসব প্রাঙ্গণের ভিতরে নানা রকম দেশীয় পোশাক ও জুয়েলারী স্টল যেমন ছিল তেমনি নানা মুখরোচক খাবারের স্টল ছিল হলে বাইরের অংশে।
রঙিন এই অনুষ্ঠানের শব্দ ও আলোক নিয়ন্ত্রনে ছিলেন সঞ্জয় টাবু ও ফটোগ্রাফার হিসেবে ছিলেন কে দে আকাশ ও পাল তাপস ।
ফাগুন হাওয়ার ১০ বছর পূর্তি শুধুই একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়—এটি ছিল প্রবাসে থেকেও মাটির টান ও শেকড়কে আঁকড়ে ধরে রাখার এক অনন্য প্রয়াস। আয়োজক সংস্থা ফাগুন হাওয়া ইনক এবং তাদের নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচেষ্টায় প্রমাণ হয়েছে—বাংলাদেশি সংস্কৃতি দূর পরবাসেও প্রাণের সাথে জড়িয়ে থাকে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category