মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৬:০২ অপরাহ্ন

হুমায়ুন কবির সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হলেন যারা

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৪২ Time View

ফরিদপুরে প্রথমবারের মতো তিন গুনি ব্যক্তিকে হুমায়ুন কবির পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তিনটি ক্যাটাগরিতে গবেষণায় ড. মোহাম্মদ আলী খান, কথা সাহিত্যে তাপস কুমার দত্ত ও সাংবাদিকতায় সাদিয়া মাহ্জাবীন এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এ সময় তাঁদের প্রত্যেককে সম্মাননা ক্রেস্ট ও পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।

ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের আয়োজনে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে হুমায়ুন কবির সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫ এর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ওই তিন ব্যক্তির কর্মপরিধি সম্পর্কে প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরা হয়। পরে তাঁদের হাতে পর্যায়ক্রমে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।

পুরস্কার পাওয়া ড. মোহাম্মদ আলী খান একজন কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, ভ্রমণকাহিনি ও শিশুতোষ গ্রন্থের প্রণেতা এবং একজন গবেষক। তার অক্লান্ত শ্রমনিষ্ঠ ‘বর্ণে শব্দে চিত্র: ফরিদপুর’ বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঠক সমাজকে অভিভূত ও উচ্ছ্বাসিত করেছে। এছাড়া তার লেখায় অনবদ্য ভঙ্গিমায় চিত্রিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, প্রকৃতির প্রতি অফুরান ভালবাসা ও শাশ্বত মানবপ্রেম, বর্ণ ও শব্দের সুঁই-সুতোয় কাগজের নকশী কাঁথায় ফুটিয়ে তুলছেন। বই রচনার পাশাপাশি তিনি একাধিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার কাজেও যুক্ত ছিলেন।

কথাসাহিত্যিক তাপস কুমার দত্তের মহাপৃথিবীর অন্ধকার ঘাসে উপন্যাস বিস্ময়করভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন রাজনৈতিক পাঠকে। যেখানে প্রতিকীভাবে এক ন্যানো এলিয়েনের আশ্রয় ঘটেছে। বিচিত্র কৌশলে উঠে এসেছে বাংলাদেশের আবহমান রাজনৈতিক বাস্তবতার কঠিন বয়ান। উপন্যাসের পাশাপাশি রয়েছে তার গল্প সংকলন। এছাড়াও তাপস কুমার দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক ও একজন চলচ্চিত্রকার।

সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম ২০০৬ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দেশের প্রথম ২৪ ঘণ্টার সংবাদ টেলিভিশন চ্যানেল সিএসবি নিউজ এ শুরু হয় তার পেশাজীবন। বর্তমানে তিনি প্রথম আলো পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। দেশের সৃজনশীল সংস্কৃতি মাধ্যমে দুর্নীতি ও উপকূলে জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব নিয়ে রয়েছে তার অসামান্য প্রতিবেদন। তার প্রতিবেদনে সুন্দরবনের সবচেয়ে দুর্গম এলাকার চিত্র উঠে এসেছে। তিনি ২০১৮ সালে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ-ভারত’ কথাসাহিত্য পুরস্কার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে জালাল আহমেদ হুমায়ুন কবিরের বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হুমায়ুন কবির ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা ও একজন মহাপুরুষ। তিনিই একমাত্র অক্সফোর্ড থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং দর্শনে অনার্স করেছেন যা উপমহাদেশে প্রথম ছিল। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রগৌতিশীল ছিলেন। তিনি ভারতের দুইবার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, যা এখনো ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যাবে। পাশাপাশি তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন, তিনি ৪৭টি বই লিখেছেন। তার লেখা নদী ও নারীর কথা বেশ আলোচিত।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি প্রফেসর আলতাফ হোসেন, সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলনসহ সাহিত্য প্রেমীরা।

প্রসঙ্গত, হুমায়ুন কবির ফরিদপুর সদরের কোমরপুর গ্রামে ১৯০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ফরিদপুরের অনন্য মাত্রার শিল্পী পুরুষ, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও রাজনীতিক ছিলেন। ১৯৩৯ সালে জমিদার পুত্র আবদ আল্লাহ জহীরউদ্দিন লাল মিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ। এই সাহিত্য পরিষদের আমন্ত্রণে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ফরিদপুর এসেছিলেন সাহিত্য সভায় যোগ দিতে। হুমায়ুন কবীর দুই দফায় ভারতের শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন, এছাড়াও ছিলেন বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রীও। ১৯৬৯ সালে মহৎপ্রাণ এই মানুষটি মৃত্যু বরণ করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category