গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জের গহনা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।এটি জেলার দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে জি.আই স্বীকৃতি অর্জন করল ।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভৌগোলিক নির্দেশক (জি.আই) পণ্য হিসেবে গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনা নিবন্ধনের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ এর ধারা ১২ অনুসারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর কর্তৃক জার্নাল প্রকাশ করা হয়। এই স্বীকৃতি জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গহনার ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া ব্রোঞ্জের গহনা তৈরির সাথে সম্পৃক্ত কারিগরদের কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ব্রোঞ্জ শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে।এলাকার আর্থ সামজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে ।
এ অর্জণে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনার জি.আই ভুক্তিকরণের সাথে সম্পৃক্ত জেলা প্রশাসন, ও মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা এবং ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (EDC) কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
চলতি বছরের ১২ মার্চ জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গহনার জিআই পণ্যের স্বীকৃতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে আবেদন করা হয় ।
উল্রেখ্যে এরআগে গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জেলার প্রথম পণ্য হিসেবে জি.আই স্বীকৃতি পায়।
ব্রোঞ্জ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও জলিরপাড় ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর সুভাষ বৈদ্য বলেন, আমাদের ওয়ার্ডেই ব্রোঞ্জের গহনা তৈরীর পল্লী প্রায় ১শ’ বছর আগে গড়ে ওঠে।পরে এটি সারা জলিরপাড় ইউনিয়নের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ পল্লীকে কেন্দ্র করে এখানে ব্রোঞ্জ মার্কেট প্রতিষ্ঠত হয়। তখন জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গহনা সুখ্যাতি সারদেশে ছড়িয়ে পড়ে।দেশের গন্ডি পেড়িয়ে এটি বিদেশের বাজারে ছড়িয়ে যায় । কিন্তু এ শিল্পে অাধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই সম্প্রতিকালে ভারত সহ বিভিন্ন দেশের ব্রোঞ্জের গহনা আমাদের বাজারের প্রায় ৫০ ভাগ দখল করে দিয়েছে । তারপরও জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গহনা তৈরী শিল্প স্বগৌরবে শতাধিক পরিবার টিকিয়ে রেখেছে। জলিরপাড় ব্রোঞ্জ মার্কেটে এখনো ৪৫টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে এখনো ব্রোঞ্জের গহনা বিক্রয় করা হয়।
ব্রোঞ্জ গহনা প্রস্তুত কারক জলিরপাড় গ্রামের জগদীশ শীল বলেন, ব্রোঞ্জ গহনা তৈরীর তামা, দস্তা ও পিতলের দাম বেড়েছে। সহজ প্রাপ্যতা কমেছে। ভারত সহ অন্যান্য দেশের ব্রোঞ্জ গহনার রং খুব চকচকা।আমাদের গহনার রং তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। দামী সুদৃশ্য, মনোহর ও সৌখিন গহনার বাজার ভারত ও চীনের দখলে চলেগেছে। তাই কানের দুল, হাতের বয়লা সহ যেসব গহনার চাহিদা রয়েছে এমন সব গহনা আমরা তৈরী করি। সরকার এ শিল্পকে অধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সবধরণের সহযোগিতা করলে আমরা ব্রোঞ্জ গহনার শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারব। এখানে এখানো মান সম্পন্ন কারিগর রয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সমন্বয়ে তাদের কাজে লাগিয়ে আমরাও দামী গহনা তৈরী করতে পারি । তা হলেই শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীরা অধিক উপার্জণ করতে পারবেন । এ শিল্প দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ ও গতিশীল করবে।
Leave a Reply