গত ১৮ মে শনিবার সিডনির ক্যাম্পবেলটাউন সিভিক হলে রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী উৎসব পালিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছেন আমাদের কথা। বিগত দুই বছর ধরে
সিডনিতে এককভাবে রবীন্দ্র নাথের জন্ম জয়ন্তী পালনের উদ্যোগ প্রথম এই সংগঠনটি নেয়। এটি ছিলো তাদের তৃতীয় আয়োজন। পুরো আয়োজন জুড়ে ছিল রবীন্দ্রনাথের গান , কবিতা , নাচ তার সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও তাঁকে নিয়ে আগত দর্শকদের ভাবনা।
অনুষ্ঠানটির শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। এরপর অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে শিশুদের কোরাস ‘আলো আমার আলো ‘ গান গেয়ে সাংষ্কৃতিক পর্বের সূচনা করা হয়। এর পরেই ছিল নতুন প্রজন্মের গান, ছড়া ও নৃত্য পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কলামিস্ট ও লেখক অজয় দাশ গুপ্ত। তিনি বলেন ,”রবীন্দ্র নাথের জন্ম না হলে শিল্প সাহিত্যের অনেক জায়গায়ই পূরণ হতো না। রবীন্দ্রনাথ দিয়েছেন আমাদের প্রশান্তি। গল্পে , কবিতায় , গানে ও দর্শনে কোথায় রবীন্দ্রনাথ নাই বাংলা সাহিত্যে। বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছিলেন সেই সময়ে এবং বাংলায় তিনিই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এই তো বাঙালির বিশাল অহংকার।”
উক্ত অনুষ্ঠানে মিলি ইসলাম রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে স্বল্প পরিসরে তথ্য পরিবেশন করেন সাংষ্কৃতিক পর্ব শুরুর আগে।
অনুষ্ঠানটির সাংস্কৃতিক পর্বগুলোকে গীতবিতানের আদলে পূজা পর্যায়, প্রকৃতি পর্যায় ও প্রেম পর্যায়ের পরিবেশনায় ভাগ করা হয়।
পূজা পর্যায়ের সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সভাপতি পূরবী পারমিতা বোস এবং এই পর্বে একটি কোরাস দুইটি নৃত্য এবং দুইটি একক সংগীত ও একটি কবিতা আবৃত্তি করা হয়।শিল্পীরা হলেন ঋদ্ধ , জুঁই, তনিমা ও বৈজয়ন্তী রেখা । প্রকৃতি পর্যায়ের সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা শাহরিন রলি এই পর্যায়ে একটি কোরাস দুইটি নৃত্য এবং একটি একক সংগীত ও একটি কবিতা আবৃত্তি করা হয়। শিল্পীরা হলেন ফারিন , প্রেরণা ডান্স গ্রুপের মারসিয়া এবং জেরীন ও পৃথিবী।অনুরুপ ভাবে প্রেম পর্যায়ের সঞ্চালনায় ছিলেন আমাদের কথা সংগঠনের সম্পাদিকা মঞ্জুশ্রী মিতা, এই পর্বেও একটি কোরাস দুইটি নৃত্য এবং একটি একক সংগীত, একটি দ্বৈত সংগীত ও একটি কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়।
শিল্পীরা হলেন মারিয়া মুন , বাঁধন , সুবর্ণা , মিশা, শ্রেয়সী ও তার নটরাজ ড্যান্স একাডেমি এবং পলি ফরহাদ। কোরাস গান গুলি পরিবেশনায় ছিলেন সুবর্না, বাঁধন মারিয়া, কলি, জুঁই ও সুরমিতা।
সঞ্চালক ও শিল্পীরা রবিঠাকুরের পূজা পর্যায় কে সাদা প্রকৃতি পর্যায়কে সবুজ ও প্রেম পর্যায়কে লাল রঙে উপস্থাপন করতে এই তিন রঙের শাড়িতে নিজেদের সজ্জিত করেছিলেন।
এছাড়াও প্রকৃতি পর্যায়ে সংযোজন করা হয় একটি নজরুল সংগীত।কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন আয়েশা কলি ‘বাঁধলো বাঁধলো ঝুলনিয়া ‘ গানটি গেয়ে । অনুষ্ঠানে যন্ত্র সংগীতে ছিলেন দিব্যজ্যোতি বড়ুয়া, পার্থ বড়ুয়া, নামিদ ফারহান, আশিক সুজন।
নতুন প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য আমাদের কথা সকলকে সার্টিফিকেট প্রদান করে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ক্যাম্পবেলটাউন সিটি কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র ইব্রাহিম খলিল মাসুদ , কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী , সিডনির কমিউনিটির বটবৃক্ষ গামা আব্দুল কাদির ও সংগঠক রাজনীতিবিদ শফিকুল আলম। এছাড়াও ছিলেন নারী সংগঠকদের মধ্যে,রোকেয়া আহমেদ, তিশা তানিয়া , এলিজা আজাদ টুম্পা, সুমী আজাদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শাফরীন প্রিয়াংকার বানানো রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর বিশেষ কেক কাটা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে , উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আগামীতে আরো সুন্দর অনুষ্ঠান পরিবেশনা করার আশ্বাস দিয়ে সকলকে রাতের খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়ে আনুষ্ঠানিকতার পরিসমাপ্তি টানেন সংগঠনের কর্ণধার এবং সঞ্চালক পূরবী পারমিতা বোস।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ যে, রাতের খাবারের মেন্যুতে ঠাকুর বাড়ীর হেঁসেল থেকে নেয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পছন্দের বেশ কয়েকটি খাবার অতিথিদের পরিবেশন করা হয়।ফুলকো লুচি, বাসন্তী পোলাও, পনির আলুর রসা, নারকোলি ছোলার ডাল, স্টিমার চিকেন, আমের চাটনী ও রসোগোল্লা।
অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগীতায় ছিল আব্দুল্লাহ আল মামুন, মইনুল হাসান সুমন ও ফাহাদ আজগর, সাঈদ মারুফ, রিকু চৌধুরী প্রমুখ।
শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন আত্ত্বাবুর রহমান। অনুষ্ঠানে চমৎকার রাবীন্দ্রিক আবহ সজ্জায় ছিলেন কানিতাজ ইভেন্ট সলিউশন।
Leave a Reply