আজকের দিনে সৌন্দর্য বা গ্ল্যামার একটি বহুল আলোচিত বিষয়বস্তু। যার মাপকাঠিতে বর্তমান সময়ের গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সাথে সাথে ব্যাবসায়িক আয়-উন্নতি জড়িত।
গ্ল্যামার এবং মডেল শব্দ দুটো একে অপরের পরিপূরক। গোটা বিশ্ব যেন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই দুই শব্দের গোলকধাঁধায়।
জানেন কি বিশ্বের প্রথম নারী সুপার মডেল কে ছিলেন? আসুন জেনে নেই কে ছিলেন সেই অপরূপা যার হাত ধরে মডেলিং পেয়েছে শিল্পের তকমা।
সেই শত বছর আগে মডেল হিসেবে খ্যাতের শিখর স্পর্শ করেছিলেন যেই নারী তার নাম ইভলিন নেস্টবিট।যাকে ডাকা হতো “আমেরিকার ইভ”।
আধুনিক বিশ্বের প্রথম এই নারী সুপার মডেল আমেরিকার সংবাদ মাধ্যমে তার প্রেম কাহিনী নিয়ে এতটাই আলোচিত ছিলেন যে তার নাম দেয়া হয়েছিলো “লাল মখমল দোলনার মেয়ে”। শিল্পীরা তার ছবি একেঁছেন,আলোকচিত্রীরা তার ছবি তুলেছেন,ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাকে মডেল বানিয়েছেন কারণ তিনি ছিলেন সত্যিকারের সুন্দরের প্রতিমূর্তি।
ইভলিনের জন্ম ফিলাডেলফিয়ার একটি অভিজাত পরিবারে।খুব অল্প বয়সেই ইভলিনের বাবা মারা যান আর তাই সংসার সামলাতে ইভলিনকে কিশোরী বয়সেই রোজগারের পথে পা বাড়াতে হয়।খুব অল্প বয়সেই তার কাজ শুরু করেন উদীয়মান শিল্পীদের ছবি আকাঁর মডেল হিসেবে।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে ইভলিন নিউইয়র্কে চলে আসেন। সালটা তখন ১৯০০। নতুন শতাব্দীর সূচনালগ্নে নিউইয়র্কের গ্ল্যামার জগতেও আসে নতুনত্ব আর এর সাথেই ইভলিনও এক নতুন জগতে প্রবেশ করেন।
প্রথমদিকে ইভলিনকে মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেন জেমস ক্যারোল ব্রেক উইথ। এই সময় তিনি অনেক খ্যাতনামা শিল্পীর মডেল হন। এখন নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট এর সংগ্রহে থাকা ভাস্কর জর্জ গ্রে বার্নার এর বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘ইনোসেন্স’ এর মডেলও তিনি।চার্লস ডানা গিবসনের ‘উইমেনঃ দ্য ইন্টার্নাল কোয়েশ্চেন’ ছবিটির মডেলও তিনি। এইভাবে ইভলিন তখনকার সময়ে প্রচণ্ড জনপ্রিয় মডেল হয়ে নিজের সৌন্দর্যের দ্যুতি ছড়ান।বহু বিজ্ঞাপনের মডেল হন এমনকি বিভিন্ন সাময়িকের প্রচ্ছদের মডেল হিসেবেও তাকে দেখা যায়। ধীরে ধীরে প্রচ্ছদ থেকে ইভলিন ফ্যাশন ফটোগ্রাফিতে চলে আসেন আর এতে করে খুব দ্রুতই তিনি মানুষের চোখে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তার ছবি তখন আর কোন মডেলের তুলিতে আঁকা হয় না তখন নানান পণ্যের বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সুপার মডেল হিসেবে তার ছবি ছাপা হতে থাকে।
শুধু তাই নয় একসময় ইভলিন নিউইয়র্কের ব্রডওয়ে থিয়েটারে মঞ্চনাটকেও অংশ নেন আর এইভাবে আস্তে আস্তে ইবলিন বিভিন্ন মুখরোচক কলামে,গল্পে,আলোচনায় স্থান করে নেন। আর এই সাফল্যের শিখরে থাকা অবস্থায় ইভলিনের জীবনে ঘটে যায় করুন পরিণতির প্রেম কাহিনী।
ভালোবেসে ঘর বাধেঁন বহু বিখ্যাত স্থাপনার স্থপতি স্ট্যানফোর্ড হোয়াইটের সাথে।কিন্তু বছর না যেতেই বিচ্ছেদ ঘটে তাদের।পরবর্তীতে আবার প্রেম-বিয়ে এবং সবশেষে একটি ত্রিভুজ প্রেমের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে এক লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।এই হত্যাকাণ্ড তখনকার সময়ে আমেরিকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা ও আগ্রহের সৃষ্টি করে।
একজন সাধারন কিশোরীর মডেল হয়ে ওঠা,তার জীবন সংগ্রাম,তার জীবনের উত্থান পতন এমনকি তার এই ট্র্যাজিক প্রেম কাহিনী, এসব কিছু নিয়ে অনেক গল্প কবিতা নাটক রচিত হয়েছে।
অসামান্য সুন্দরী ইভলিন যে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে নিজেকে সুপার মডেল হিসেবে তৈরী করেছিলেন তার সেই পথের পথিক অনেকের কাছেই তিনি তার কর্মের মধ্য দিয়ে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবেন।
Leave a Reply