বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত।আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির আতুঁড়ঘর বলতে যে ভবনটি এক ঝলকে চোখের সামনে চলে আসে তার নাম ‘মধুর ক্যান্টিন’।পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক দেশটির জন্মলগ্ন থেকে নানা আন্দোলন-সংগ্রামের রাজসাক্ষী যেমন তেমনি সংস্কৃতি চর্চার পথিকৃৎ হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে এই অনন্য স্থাপনাটি।
নানা নামের পরিবর্তনের পর আজকের মধুর ক্যান্টিন নামের বর্তমান ভবনটি শ্রীনগরের জমিদারের জলসাঘর বা বাগানবাড়ি ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বাগানবাড়ির দরবার হলটিতে তৈরি করা হয় ক্যান্টিনটি যা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের কাছে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) ভবনের পাশে অবস্থিত।
মাত্র বারো বছর বয়সে মধুসূদন দে বাবা আদিত্য চন্দ্রের অসুস্থতার কারণে ব্যবসার হাল ধরেন।১৩৭৯ বঙ্গাব্দের ২০শে বৈশাখ ক্যান্টিনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) উদ্যোগে নাম দেয়া হয় ‘মধুর রেস্তোরা’।এরপর নানা নাম বদলের পর ‘মধুর ক্যান্টিন’নামে পরিচিতি পায়।
সাধারন একজন ব্যবসায়ী মধুসূদন দে তাঁর সততা ও আচরণে ছাত্র-শিক্ষকমহলে এতটাই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন যে তাঁর ক্যান্টিনে বসেই দেশ নিয়ে ছাত্রনেতারা বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতেন বা বৈঠকে মিলিত হতেন।
এরপর আসে ১৯৭১ সালের ভয়াল ২৫শে মার্চ।’’অপারেশন সার্চলাইট’’নামে যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ পাকিস্থানি সেনারা সেদিন চালিয়েছিলো তার বলি হন সকলের প্রিয় ‘মধু দা’।
সে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বড় হত্যাকান্ডটি ঘটে জগন্নাথ হলে।আর এই জগন্নাথ হলের পূর্ব পাশে একটি চারতলা বাড়ির ২য় তলায় মধুসূদন দে তাঁর পরিবার নিয়ে থাকতেন।২৬ মার্চ সকালে এই বাড়িতেই মধুসূদন দের স্ত্রী যোগমায়া দে, ছেলে রনজিৎ কুমার দে, পুত্রবধূ রীনা রানী দেকে হত্যা করে হানাদাররা। পরে জগন্নাথ হলের মাঠে নিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় মধুসূদন দে কে। ১৯৭১ সালে তাঁর ক্যান্টিনটিও পাকিস্তানি হায়েনাদের রোষানলে পড়ে।
সময়ের পরিক্রমায় তাঁর স্মরণে তাঁরই গড়া ক্যান্টিন প্রাঙ্গণে নির্মিত হয়েছে স্মৃতি ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটির গায়ে লেখা রয়েছে ‘আমাদের প্রিয় মধুদা’।
গত ২৪শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় থেকে প্রকাশিত ১১৮জন শহীদ বুদ্ধিজীবির তালিকায় স্থান পেয়েছে সকলের প্রিয় মধু দার নাম।একদিন একটি অতি সাধারণ ভবন “মধুর ক্যান্টিন” হয়ে উঠেছিল একটি দেশের নীতি নির্ধারনের সূতিকাগার।আর একজন মধুসূদন দে হয়ে উঠেন প্রাতঃস্মরনীয় ব্যাক্তিত্ব।
Leave a Reply