রিশাদ হোসেন, নামটা মনে রাখতেই হবে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচেও তার ব্যাটে ঝড় উঠেছিল, কিন্তু সে যাত্রায় ফলটা পক্ষে আসেনি। ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে দলে সুযোগ পেয়ে আবার ব্যাট হাতে রুদ্ররূপে হাজির রিশাদ। তার ব্যাটে চড়ে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে লঙ্কানদের ৪ উইকেট হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টসভাগ্য ছিল শ্রীলঙ্কার পক্ষে। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামা লঙ্কানরা শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিল। ১৫ রানের মধ্যেই যে তাসকিন আহমেদ সফরকারীদের দুই ওপেনারকেই সাজঘরের পথ দেখান।
শুরুর ধাক্কা সামলে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন চরিত আসালাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। তবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই তাদের ইনিংসের যতি টানেন যথাক্রমে মুস্তাফিজুর রহমান এবং রিশাদ হোসেন। ৩৭ রান করে আসালাঙ্কা এবং ২৯ রানে মেন্ডিস উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে দলের বিপদ বাড়ান।
সে বিপদ থেকে লঙ্কানদের টেনে তোলার কাজটা করার চেষ্টা করেন জেনিথ লিয়ানাগে। ১০২ বলে ১১ চার এবং ২ ছক্কায় ১০১ রানের হার না মানা ইনিংসও খেলেন। তবে পরের ব্যাটাররা তাকে ন্যূনতম সমর্থন দিতে ব্যর্থ হলেও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে দলকে দুইশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দিতে ভূমিকা রাখেন লিয়ানাগে।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট পান তাসকিন। দুটি করে উইকেট যায় মুস্তাফিজ এবং মেহেদী হাসান মিরাজের ঝুলিতে।
ফিল্ডিংয়ের সময় চোটের কারণে সৌম্য সরকারকে হারায় বাংলাদেশ। তার কনকাশন বদলি হিসেবে নেমে দারুণ এক ইনিংস খেলেন তানজিদ হাসান তামিম। তবে তার আশপাশের অন্য ব্যাটারদের উপর দিয়ে বয়ে যায় লাহিরু কুমারা। এই লঙ্কান পেসারের শিকার বনেছেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয় এবং মাহমুদউল্লাহ।
প্রথম ওয়ানডেতে ৩৭ রান করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া কার্যকরী ইনিংস খেললেও মাহমুদউল্লাহ পরের দুই ম্যাচে করলেন যথাক্রমে ০ এবং ১।
অভিজ্ঞ ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে ৫১ বলে ফিফটি তুলে নেন তানজিদ। ৯ চার এবং চারটি বিশাল ছক্কার সাহায্য ৮৪ রানের ইনিংস খেলে তাকে থামতে হয় ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে। বড় শট হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে আসালাঙ্কার ক্যাচ হয়ে পুড়েছেন সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে। তাকে হারিয়ে দলের বিপদও বেড়েছে বৈকি!
তবে ষষ্ঠ উইকেটে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম এবং মেহেদী হাসান মিরাজের ৪৮ রানের জুটিতে আবার জয়ের স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। হাসারাঙ্গার বল শুন্যে ভাসিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়ার আগে তার ব্যাটে আসে ২৫ রান।
মিরাজ ফেরার পর দৃশ্যপটে আগমন রিশাদ হোসেনের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তার ব্যাটে তাণ্ডব দেখেছিল ক্রিকেট অনুরাগীরা। আজ সুযোগ পেয়ে আবারও জ্বলে উঠেছে তার ব্যাট। ১৮ বলে ৪৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে দলকে এনে দিয়েছেন জয়। তার ব্যাটিং তাণ্ডবে ৯.৪ ওভার হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ঘরের মাঠে টানা দুই ওয়ানডে সিরিজে হারের দুঃস্মৃতি পিছু ঠেলে আবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের দুঃখও এই জয়ে কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। সাদা বলের দুই সিরিজ শেষে এখন সাদা পোশাকের লড়াইয়ে নামবে দুই দল। আগামী ২২ মার্চ সিলেটে শুরু হবে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট।
Leave a Reply