সিডনির মাউন্ট আনানে বার্ডিয়া বাংলা পাঠশালার সার্টিফিকেট ও ক্রীড়া উৎসব পালিত হয়েছে। উদার আকাশের নিচে রঙে আলোয় মেতে উঠল এ বার্ষিক আয়োজন। সিডনির মাউন্ট আনানের অস্ট্রেলিয়ান বোটানিক গার্ডেন রোববার সকালে বিশেষ এক প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে ওঠে। বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত দিন বার্ডিয়া বাংলা পাঠশালার সার্টিফিকেট প্রদান ও ক্রীড়া উৎসব ঘিরে শিক্ষার্থী, পরিবার, শিক্ষক ও অতিথিদের পদচারণায় পুরো উদ্যানে বিরাজ করছিল উৎসবের এক স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস। প্রকৃতির মাঝে এমন মিলনমেলা যেন শিশুদের ভাষা সংস্কৃতির পথচলাকে আরেক ধাপ এগিয়ে দিল।

অনুষ্ঠানের সূচনাপর্বে অভ্যর্থনা জানান শিক্ষক শারিয়া নূর। পাঠশালার সভাপতি ড. রফিক ইসলামের অসুস্থতার কথা জানানো হলে সবাই দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন এবং তাঁর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। এরপর শিক্ষার্থী নোয়া রাজার কান্ট্রি একনলেজমেন্ট পাঠ করে এবং দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতে সকলে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

দিনের সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল শিশুদের সৃজনশীলতার এক রঙিন মঞ্চ। নীলুফা ইয়াসমিন, শারিয়া নূর ও সাদিয়া আফরিন তানিয়ার পরিকল্পনায় সাজানো পরিবেশনাগুলোতে ছিল গান, কবিতা, নাচ ও একক আবৃত্তির দারুণ সমন্বয়। শিশু আরিব ও আরভের কণ্ঠে পরিবেশিত গান দর্শকদের মনোযোগ ছিনিয়ে নেয় মুহূর্তেই। প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় মনিার জামান ও সাঈদ ইমরান অনুষ্ঠানকে করে তোলে আরও গতিময় এবং আপন।

বক্তব্যে অধ্যক্ষ মিলি ইসলাম তুলে ধরেন পাঠশালার ধারাবাহিক অর্জন, প্রবাসে শিশুদের ভাষা শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা, এবং অভিভাবকদের অব্যাহত সহযোগিতার গুরুত্ব। বাংলা ভাষা ও কমিউনিটিতে দীর্ঘদিনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী ও কাউন্সিলর আশ রহমানকে প্রদান করা হয় বিশেষ সম্মাননা।

দুপুরের পরপরই শুরু হয় সবার প্রতীক্ষিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। ভেট্টি রাজার তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ইভেন্টে শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল উচ্ছ্বাসমুখর ১০০ মিটার স্প্রিন্ট থেকে বল দৌড় পর্যন্ত প্রতিটি খেলায় ছিল হাসি, প্রতিযোগিতা এবং খেলাধুলার আসল প্রফুল্লতা। শুধু শিশুরাই নয়, অভিভাবকদের অংশগ্রহণে মিউজিক্যাল চেয়ার ছিল দিনের অন্যতম আনন্দঘন মুহূর্ত।
শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট তুলে দেন অধ্যক্ষ মিলি ইসলাম ও হামিদা খাতুন। এ বছরের গর্বের অর্জন ছিল মন্ত্রী পর্যায়ের মেধা পুরস্কার যা অর্জন করে শিক্ষার্থী আরিমা সৈয়দা। শিক্ষা কর্মকর্তা মিসেস এনিয়া গ্যানন তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দিলে উপস্থিত সবাই উল্লাস ও গর্বে অভিভূত হয়ে ওঠেন।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফেরদৌস ওমি স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবকদের তার বক্তব্যে ধন্যবাদ জানান এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. রফিক ইসলামের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। বাংলা পাঠশালার দীর্ঘদিনের শিক্ষাসেবা ও নিষ্ঠার স্বীকৃতিতে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক অধ্যক্ষদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। বক্তব্য দেন জনাব শফিকুল আলম ও ট্রাস্টি কায়সার আহমেদ। দিন শেষে দলীয় ছবি আর সৌহার্দ্যের উষ্ণ হাসি মিলিয়ে উৎসবটি গড়ে ওঠে এক অনন্য দিনে।
এ বছরের আয়োজনের পরিকল্পনা, কোরিওগ্রাফি ও সাংগঠনিক নেতৃত্ব দেন রুমানা ইসলাম; আর পুরো অনুষ্ঠানকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব সামলান স্কুলের সচিব তানবীর আলম যার দূরদর্শী সমন্বয়ে দিনটি হয় নিখুঁত সফল।