ঈদ মানেই মিলন, উচ্ছ্বাস আর হৃদয়ের টান। আর সেই টান যেন আরও গভীর হয়ে ওঠে প্রবাস জীবনে। পরিবার-স্বজন থেকে দূরে থেকেও উৎসবের ছোঁয়া ঠিকই পৌঁছে যায় — যদি থাকে আন্তরিক আয়োজন আর উষ্ণ হৃদয়।
এমনই এক মিলন উৎসবের দৃশ্য ধরা পড়ে গেল ১৫ জুন সিডনির মিন্টোতে। নতুন একটি ভেন্যু “মিন্টো কিচেন”-এ প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিশেষ ঈদ পুনর্মিলনী ২০২৫। রোববার সন্ধ্যায় মিন্টো এলাকার নতুন ভেন্যু “মিন্টো কিচেন”-এর এই প্রিতী ভোজে সিডনির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নেন প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি।
সন্ধ্যার পরপরই জমে ওঠে উৎসব মুখর পরিবেশে আড্ডা ।পরিচিত-অপরিচিত মুখ একসাথে মিশে যায় আনন্দের স্রোতে। কোথাও গল্প, কোথাও হাসির রোল, আবার কোথাও আবেগভরা দেখা-সাক্ষাৎ এবং এক পাশে চলছে লাইভ গান-বাজনা — যেন এক টুকরো বাংলাদেশ উঁকি দিচ্ছিল প্রবাসের মাটিতে।
অনুষ্ঠানটি বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয়েছিল নতুন প্রজন্ম ও নবাগত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য, যারা হয়তো এই প্রথম দেশের বাইরে ঈদ কাটাচ্ছেন। তাদের মাঝে উৎসবের আনন্দ বিলিয়ে দিতে চেয়েছেন আয়োজকরা, যেন প্রবাসেও পরিবারের উষ্ণতা অনুভব করতে পারে সবাই।
ঈদ মানেই খাওয়া-দাওয়া। আর তাই পুনর্মিলনীর বিশেষ খাবারের আয়োজনে ছিল ঈদ উল আজহার কোরবানির খাসি এবং গরুর মাংস, পোলাও, সালাদ, পরোটা, রুটি, সেমাই জিলাপি সহ নানা রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার, কোমল পানীয় ও শীতের সন্ধ্যায় অত্যাবশকীয় গরম গরম চা — এছাড়াও বাচ্চাদের জন্য ছিল বার্গার, নাগেটস চিপস— যেন একসাথে ছোট বড় সকলের আনন্দের পূর্ণতা দেয় এই উৎসব।
সন্ধ্যার পর মঞ্চে ছিল লাইভ মিউজিক পরিবেশনা। রাসেল ইসলাম, তানভীর হাওলাদার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, নজরুল ইসলাম ও শুভ সাথীর গানে সুরের ভেলায় চড়ে যেন দর্শক-শ্রোতার হৃদয় ভেসে যায় অন্য এক দেশে — মনে পড়ে যায় সেই শৈশব, সেই ঈদ মোবারকের হৈ হুল্লোড় আর মায়ের হাতের রান্না।
অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করেন বাংলাদেশ কমিউনিটি সাউথ ওয়েস্ট, মিন্টো কিচেন, মেজবান ইঙ্গেলবার্ন এবং আরও অনেকে, যারা নিঃশব্দে ভালোবাসা আর আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করে গেছেন।
আয়োজকদের একজন মাসুদ পারভেজ বলেন,“আমরা চেয়েছি সবাই যেন এখানে এসে নিজেদের একা না ভাবেন। প্রবাস জীবন কঠিন, কিন্তু একসাথে হলে সেটাও সহজ হয়ে যায়।”
আয়োজকদের তালিকায় আরও ছিলেন মনির দেওয়ান, ইব্রাহিম খালিল মাসুদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ আনিসুল হক, মোহাম্মদ নূরুল মাসুদ, আজমি, ইয়াসির আহমেদ সবুজ, শামসুল আলম, মোহাম্মদ রেজাউল হাসান স্বপন, মাহমুদ ইমন, তানভীর হাওলাদার, মামুন রেজা, আশরাফুল আলম রনি, রশিদ মাম্মা, মোহিবুল মুজিব, রেজা খান, মোহাম্মদ মোস্তফা হেলাল, আরিফুর রহমান, মইন সাব্বির, মাহমুদুল হাসান,মোহাম্মদ সামিসহ আরো অনেকেই ।
উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী কমিউনিটির গন্যমান্য ব্যক্তিগন উপস্থিত ছিলেন। প্রচুর শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বয়সী ও পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য যে , ঈদ আনন্দ-পুনর্মিলনী শুধুমাত্র একটি উৎসবের আয়োজন ছিল না; এটি ছিল প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে সামাজিক সংযোগ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষার একটি মহৎ উদ্যোগ।এই আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসীদের মাঝে এক আত্মিক সেতুবন্ধন, যেখানে একে অন্যের মুখে হাসি দেখেই পাওয়া গেছে ঈদের পূর্ণতা।
Leave a Reply