বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জগতে নৈতিকতা, পেশাদারিত্ব ও বিবেকনির্ভর লেখালেখির যে ধারাবাহিক চর্চা সাংবাদিক সোহরাব হাসান তার অন্যতম প্রতীক। ব্যক্তিগত সফরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থানকালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয় আন্তরিক শুভেচ্ছা ও গভীর সম্মান।

সিডনির ইংগেলবার্নে অবস্থিত মেজবান রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এই অনানুষ্ঠানিক অথচ মর্যাদাপূর্ণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, লেখক, রাজনীতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। উষ্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক প্রাণবন্ত মিলনমেলায়।

প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজের পরিচিত মুখ, সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শফিকুল আলমের উদ্যোগে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী এবং কাউন্সিলর আশিকুর রহমান। এছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর ইসলাম বাবু, জন্মভূমি টেলিভিশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক রেজা আরেফিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহদাৎ হোসেন, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কায়সার আহমেদ, মোবারক হোসেন, নজরুল ইসলাম সাচ্চু, কামাল পাশা, গিয়াস উদ্দিন মোল্লা , ইফতেকার উদ্দিন ইফতু,মাকসুদুর রহমান চৌধুরী সুমন , মুস্তাফিজ তালুকদার মঞ্জু ও সাজ্জাদ সিদ্দিকীসহ সিডনির বিভিন্ন সামাজিক ও কমিউনিটি অঙ্গনের প্রতিনিধিরা।

নারী নেতৃত্বের সক্রিয় উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে করে তোলে আরও তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে সেলিমা বেগম, আমাদের কথা নিউজ পোর্টালের প্রধান সম্পাদক পূরবী পরিমিতা বোস, ফাগুন হাওয়ার কর্ণধার তিশা তানিয়া, আমাদের কথা ইনকের সম্পাদক মঞ্জুশ্রী মিতা, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি খালেদা কায়সার, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী আরফিনা মিতাসহ আরও অনেকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অপু সারওয়ারের সজীব সঞ্চালনায় আলোচনার পরতে পরতে তুলে ধরা হয় সোহরাব হাসানের দীর্ঘ ও বহুমাত্রিক সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা। বক্তারা তাঁর লেখায় নৈতিক অবস্থানের দৃঢ়তা, পেশাগত নিষ্ঠা এবং পক্ষপাতমুক্ত দৃষ্টিভঙ্গির ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, সত্য ও তথ্যকে কেন্দ্র করে অবিচল থাকার যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন, তা নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য এক অনুকরণীয় পথনির্দেশ।
অনুষ্ঠানে আলাদাভাবে সম্মান জানানো হয় সোহরাব হাসানের সহধর্মিণীকেও। বক্তারা বলেন, নীরব এই সহযাত্রীর ধৈর্য, সমর্থন ও সহযোগিতা তাঁর দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতা, লেখালেখি ও গবেষণামূলক কাজের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
আলোচনার একপর্যায়ে উঠে আসে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। উপস্থিত অতিথিদের প্রশ্নের জবাবে সোহরাব হাসান সংক্ষেপে তাঁর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হলে স্বাধীন মতপ্রকাশ, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কোনো বিকল্প নেই।
সমাপনী বক্তব্যে সোহরাব হাসান আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, প্রবাসে থেকেও বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার প্রতি মানুষের যে গভীর অনুরাগ ও শ্রদ্ধা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, তা তাঁকে সত্যিই আপ্লুত করেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তা ও অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি সমসাময়িক সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রবাসী কমিউনিটির ভূমিকা নিয়ে তাঁর ভাবনা স্পষ্ট ও প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কোনো বিকল্প নেই এবং সে লক্ষ্যেই তিনি সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন। প্রবাসে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম ও বক্তব্য যেন মূলধারার গণমাধ্যমে যথাযথভাবে প্রকাশের সুযোগ পায় সে বিষয়ে তিনি তাঁর সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বক্তব্যের শেষাংশে সোহরাব হাসান উল্লেখ করেন, তাঁকে দেওয়া এই সম্মান ও ভালোবাসা তাঁর দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে এক অনন্য স্মৃতি হয়ে থাকবে, যা তিনি আজীবন বহন করবেন।
নৈশভোজ ও আন্তরিক আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।