সিডনিতে প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বরাবরের মতোই একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, রবিবার, এ্যাশফীল্ড সিভিক সেন্টারে এক আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
একুশে একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক, বুলবুল আহমেদে সাজুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকাল ৩টায়। শুরুতেই Acknowledgement of Country এবং এরপর বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। ১৯৭১ সালের শহিদ বুদ্ধিজীবী, ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
একুশে একাডেমীর সাংস্কৃতিক দল ‘অভিযাত্রী’ দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে। এতে অংশ নেন অমিয়া মতিন, অভিজিৎ বড়ুয়া, পিয়াসা বড়ুয়া, রোকসানা, আনিসুর রহমান, লিলি গোমেজ, বেঞ্জামিন গোমেজ এবং ছায়া বিশ্বাস। তবলায় সঙ্গত করেন মিঠু বর্মন।
দলীয় ও একক সংগীতের পর বিজয় দিবসের কেক কেটে মহান শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বিশেষ আলোচনা সভা শুরু হয়। সভায় বক্তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার তাৎপর্য, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংরক্ষণের গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখেন। এতে অংশগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান তরুণ, সাইদুজ্জামান খান, শাহাদাত হোসেন এবং আবুল এইচ এম হেলাল উদ্দিন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা একমাত্র খেতাবপ্রাপ্ত বিদেশি নাগরিক মি. ওডারল্যান্ড এবং বীর প্রতীক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ড. কাইউম পারভেজ। এছাড়া সিডনির বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ—ড. সিরাজুল হক, গামা আব্দুল কাদির, নেহাল নেয়ামুল বারী, অজয় দাশগুপ্ত, ড. লাভলী রহমান এবং কাউন্সিলর এলিজা রহমান টুম্পা—ও বক্তব্য রাখেন। বক্তারা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ জাগ্রত রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।উক্ত অনুষ্ঠানে ডঃ মনিরা হক রক্তদান কর্মসূচি ও অরগ্যান ডোনেশনের উপর আলোকপাত করেন এবং সকলকে উদ্বুদ্ধ করে বলেন একজনের অঙ্গদানের মাধ্যমে ৬ জনের বেশি রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব । তাই সকলকে তিনি এই মরণোত্তর অঙ্গদানের বিষয়ে উৎসাহিত করতে চান ।
আলোচনা সভার পর শুরু হয় প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক আয়োজন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন আফসানা আহমেদ রুচি। শিশু, তরুণ ও প্রবীণ সব বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানটিকে করে তোলে আরও উজ্জীবিত। মনোহর নৃত্য পরিবেশন করেন মৌসুমি সাহা ও তার নৃত্যাঞ্জলী ড্যান্স একাডেমির দল। একক ও দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করেন রোকসানা, আনিসুর রহমান, পিয়াসা বড়ুয়া, অভিজিৎ বড়ুয়া, লিলি গোমেজ এবং অমিয়া মতিন। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকাইয়া খাতুনের লেখা থেকে পাঠ করেন অনীলা পারভীন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে অতিথিদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ড. সুলতান মাহমুদ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ অনুষ্ঠিতব্য একুশে বইমেলায় অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন।