লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল-হিলওয়ে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। হামলায় আরও অন্তত চারজন আহত হয়েছেন, এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় অতিরিক্ত আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার উপকূলীয় শহর সাইদার কাছের শিবিরটির একটি মসজিদের পার্কিং লটে থাকা গাড়িকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা এনএনএ।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য ছিল শিবিরের ভেতরে সক্রিয় হামাস সদস্যরা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিখাই আদ্রেয়ি বলেন, ‘উত্তর সীমান্তে কোনও হুমকি বরদাস্ত করা হবে না। লেবাননে হামাসের যে কোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে হামাস ইসরায়েলের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, শরণার্থী শিবিরের ভেতরে তাদের কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই এবং এই হামলাকে তারা ‘নিরীহ জনগণের ওপর বর্বর আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
এর আগে একই দিনে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের আরেক এলাকায় ইসরায়েল দুটি গাড়িতে হামলা চালালে দুজন নিহত হন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে লেবাননে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলা বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক হিসেবে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৬৯ হাজার ৪৮৩ জন ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পরদিন থেকেই লেবাননের হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়া শুরু করে, যার জবাবে ইসরায়েলও লেবাননে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালায়। ধীরে ধীরে এই সংঘাত ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। সে যুদ্ধে লেবাননে নিহত হন ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে বহু বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন। ইসরায়েলে নিহত হন ১২৭ জন, যার ৮০ জনই সেনা।
২০২৪ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হলেও ইসরায়েল লেবাননে হামলা অব্যাহত রেখেছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় দেশটিতে ২৭০ জনের বেশি নিহত এবং প্রায় ৮৫০ জন আহত হয়েছেন।
লেবাননের রাজনৈতিক বিশ্লেষক করিম এমিল বিতার জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। এই পরিস্থিতিতে লেবানন সরকারকে দোষারোপ করা ঠিক নয়।’ তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বরের সমঝোতা অনুযায়ী ইসরায়েলের ২৬ জানুয়ারির মধ্যে দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করার কথা থাকলেও তারা তা মানেনি।