বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জগৎ আজ শোকে আচ্ছন্ন। দেশের অন্যতম প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও প্রগতিশীল চিন্তাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই। বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনায় জন্ম নেওয়া এই মনীষী ছোটবেলা থেকেই জ্ঞানার্জন ও মুক্তচিন্তার আলোয় উজ্জ্বল ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা সাহিত্য পড়িয়েছেন। তাঁর শ্রেণিকক্ষ শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, ছিল মুক্তবুদ্ধির এক আলোকিত আসর, যেখানে আলোচনা হতো ভাষা, ইতিহাস, সাহিত্য, রাজনীতি ও মানবমুক্তির পথ নিয়ে।
যতীন সরকার শুধু শিক্ষক নন, ছিলেন সমাজভাবুক ও অবিচল মানবতাবাদী। তাঁর লেখনীতে যেমন ছিল প্রখর যুক্তি, তেমনি ছিল মমতার স্নিগ্ধ পরশ। তিনি বিশ্বাস করতেন, বাঙালি জাতির মুক্তি আসবে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক ন্যায়ের মাধ্যমে।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭) ও স্বাধীনতা পদক (২০১০) প্রাপ্ত এই গুণী মানুষটি আজীবন সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মুক্তচিন্তার চর্চা করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫টিরও বেশি—যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সমাজতত্ত্ব একত্রে মিশে আছে। প্রতিটি বই শুধু গবেষণা নয়, এক একটি বাঙালির আত্মপরিচয়ের দলিল।
তাঁর প্রস্থান এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাঙালির মেধা ও মননের ভুবনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা সহজে পূরণ হবে না। তিনি চলে গেলেন, কিন্তু রেখে গেলেন মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা, যা আগামীর প্রজন্মকে পথ দেখাবে।
অধ্যাপক যতীন সরকারকে জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছে। তাঁর পরিবার, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও অসংখ্য পাঠকের প্রতি জানাই আন্তরিক সমবেদনা।