শরীরচর্চা করতে গিয়েই প্রাণ হারালেন এক উদীয়মান ক্রিকেটার। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই জীবনের ইনিংস শেষ হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরের তরুণ প্রতিভা প্রিয়জিত ঘোষের। শুক্রবার সকালে জিমে ওয়ার্কআউট করার সময় আচমকা পড়ে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে।
প্রিয়জিতের বাড়ি বীরভূম জেলার পাঁড়ুই থানার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামে। ২০১৮-১৯ সালের আন্তঃজেলা অনূর্ধ্ব ১৬ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন এবং সেই স্বীকৃতিস্বরূপ সিএবি (ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল)-র তরফে পুরস্কৃতও হন। রঞ্জি ট্রফিতে খেলার স্বপ্ন ছিল তাঁর , সেখান থেকে একদিন দেশের জার্সিতে মাঠে নামার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হল না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে বোলপুরের মিশন কম্পাউন্ডের একটি জিমে শরীরচর্চা করছিলেন প্রিয়জিত। ব্যায়াম চলাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। জ্ঞান হারানোর পর দ্রুত তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের মত, একটি ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টই এই অকাল মৃত্যুর কারণ।
এই আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ক্রীড়ামহল। শুধু পরিবার নয়, প্রিয়জিতের বন্ধুবান্ধব, প্রাক্তন কোচ ও সতীর্থরা বিশ্বাস করতে পারছেন না-একজন সুস্থ, ফিট এবং প্রতিভাবান ক্রিকেটার এভাবে হঠাৎ শেষ হয়ে যেতে পারেন! স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাব ও প্রশিক্ষকরা জানিয়েছেন, তিনি অত্যন্ত নিয়মানুবর্তী ও পরিশ্রমী খেলোয়াড় ছিলেন। তাঁকে হারিয়ে বোলপুর ও বীরভূমের ক্রীড়াঙ্গনে যেন হঠাৎ করে নেমে এসেছে এক শূন্যতা।
এদিকে প্রিয়জিতের মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন উঠছে তরুণদের ফিটনেস চর্চার নিরাপত্তা ও যথাযথ নির্দেশনার অভাব নিয়ে। চিকিৎসকদের মতে, ব্যায়াম শুরু করার আগে পূর্ণ স্বাস্থ্যপরীক্ষা, হার্ট ও ইসিজি চেক-আপ এবং প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধান অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে যখন হাই-ইনটেনসিটি ট্রেনিংয়ে শরীরকে ধাক্কা দেওয়া হয়। অনেকেই বলছেন, প্রিয়জিতের মতো একজন ফিট যুবকের হঠাৎ মৃত্যু যদি এমন হয়, তবে অগণিত তরুণ যারা জিমে যোগ দেন, তাঁদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়েও বড় প্রশ্ন উঠে গেল।
ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। পাঁড়ুই থানার পক্ষ থেকে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃত্যুর সময় জিমে কে কে উপস্থিত ছিলেন, কী ধরণের ব্যায়াম করছিলেন প্রিয়জিত, জিমে প্রশিক্ষকের ভূমিকা কতটা ছিল সব দিকই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তরুণ এই প্রাণের এমন মর্মান্তিক প্রস্থান শুধু একটি সম্ভাবনাময় ক্রীড়া ক্যারিয়ারের অবসান নয়, বরং সমগ্র সমাজের কাছে এক গুরুতর সতর্কবার্তা। এখন সময় এসেছে নতুন করে ভাবার শরীরচর্চা শুধুই বাহ্যিক ফিটনেস নয়, বরং এর পিছনে থাকা শারীরিক সক্ষমতা, পরিকাঠামো ও দায়িত্বশীল নির্দেশনার দিকটিও সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত।