গত ১৭ই মে শনিবার কেয়ার্ন্স কমিউনিটি হল সিডনিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অর্পিতা সোম ড্যান্স ক্লাসের’-এর এর বহুল প্রতীক্ষিত বার্ষিক অনুষ্ঠান ২০২৫।
নৃত্য শুধুমাত্র শারীরিক অভিব্যক্তি নয়—এ এক আত্মার প্রকাশ, সংস্কৃতির অনুরণন। এমনই এক সন্ধ্যায়, যেখানে নৃত্য হয়ে উঠেছিল ভালোবাসার ভাষা ও পারিবারিক বন্ধনের প্রতীক।এই অনন্য আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন ক্লাসের সমস্ত শিক্ষার্থী, তাঁদের পরিবারবর্গ এবং আমন্ত্রিত অতিথিমন্ডলী।
কেয়ার্ন্স কমিউনিটি হলের প্রাণবন্ত পরিবেশ যেন জেগে উঠেছিল এক সাংস্কৃতিক উৎসবে। সন্ধ্যার শুরুতেই ছোট্ট ছোট্ট শিল্পীদের দেশাত্মবোধক গানের ওপর ভিত্তি করে নৃত্য পরিবেশনা মুগ্ধ করে সকলকে। এরপর একে একে মঞ্চে উঠে আসে শুদ্ধ কত্থক, মিউজিকাল ফিউশন, আধুনিক নৃত্য, এবং লোকসংগীত ভিত্তিক পরিবেশনা—যা ছিল বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীলতা ও কঠোর পরিশ্রমের ফল।
এই সন্ধ্যার সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী মুহূর্ত ছিল যখন খুদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের বাবা-মায়েরা মঞ্চে নাচ ও কবিতা পরিবেশন করলেন। মা-বাবার মুখে গর্বের হাসি, শিশুর চোখে আনন্দের ঝলক, আর নৃত্যের মধ্য দিয়ে প্রজন্মান্তরের সংযোগ—এই বিশেষ পরিবেশনা যেন এক আবেগঘন মুহূর্ত সৃষ্টি করল, যা দর্শকদের হৃদয়ে দীর্ঘকাল গেঁথে থাকবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিডনির বাংলা কমিউনিটির কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, যাঁরা এই প্রয়াসের প্রশংসা করে বলেন, “এই ধরনের অনুষ্ঠান শুধু শিল্পকলার বিকাশ নয়, আমাদের শিশুদের মধ্যে শিকড়ের সন্ধান ও সংস্কৃতির বীজ বপনের এক আশাব্যঞ্জক প্রয়াস।”
অর্পিতা সোম নিজেই ছিলেন পুরো আয়োজনের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশক। তাঁর নিখুঁত পরিকল্পনা, যত্নশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি ভালোবাসার ছোঁয়া প্রতিটি পরিবেশনায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর অনুপ্রেরণায় শিশুরা শুধু নৃত্যশিল্পী নয়, হয়ে উঠছে আত্মবিশ্বাসী, সংবেদনশীল এবং সংস্কৃতিমনা মানুষ।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে এক গর্বময় পর্ব—প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বছরের নৃত্যচর্চার কৃতিত্বের জন্য পুরস্কার ও সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়। এই স্বীকৃতি শুধু তাঁদের পরিশ্রমের স্বীকৃতি নয়, বরং ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।
অনুষ্ঠানটি চিত্রধারণে সহযোগিতা করেছে রাই ফটোগ্রাফি সিডনি, যিনি এই অনন্য সন্ধ্যার প্রতিটি আবেগঘন মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন নিপুণভাবে।
শব্দ এবং আলোক নিয়ন্ত্রনে ছিলেন সৈয়দ হাসানুজ্জামান মাহাদী।
এই সন্ধ্যা ছিল কেবল একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন নয়, বরং এক সম্প্রদায়ের মিলনমেলা, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সংস্কৃতির উত্তরাধিকার তুলে দেওয়ার প্রাণবন্ত প্রয়াস।
Leave a Reply