গত ১৭ মে ২০২৫ শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর পূজা অ্যান্ড কালচার (BSPC) প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আয়োজন করল এক হৃদয়গ্রাহী ও বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উদযাপন উপলক্ষে তিন মহান কবি—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মজয়ন্তী।
BSPC বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সূচনা হয়। অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন-ভারপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা মিতা দে। পরিবেশনাগুলো উপস্থাপনায় ছিলেন বাংলা স্কুলের শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, লারিনা নুপূর রোজারিও, শ্রেয়সী দাস, প্রঞ্জা বর্ণিকা কর্মকার এবং প্রধান শিক্ষিকা পায়েল রায়। শিশু ও কিশোরদের উপস্থাপনায় মুগ্ধ হন দর্শকরা।
পরবর্তী পর্যায়ে গীতি-আলেখ্যে BSPC সদস্য ও অভিভাবকরা অংশগ্রহণ করেন, যেখানে কাব্য, গান ও নাট্য সংলাপের সম্মিলনে ফুটে ওঠে বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিক। এরপর মঞ্চস্থ হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চণ্ডালিকা গীতি-নাট্য। নাট্যটির নির্দেশনায় ছিলেন শ্রেয়সী দাস ও প্রঞ্জা কর্মকার। নিখুঁত উপস্থাপনা, সংবেদনশীল অভিনয় ও সঙ্গীতের মেলবন্ধনে নাট্যাংশটি দর্শকদের আবেগতাড়িত করে।
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন সিডনির প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী অমিয়া মতিন, যিনি নজরুল গীতির এক অপূর্ব পরিবেশনায় দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। পাশাপাশি ড. রতন কুন্ডুর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের “বিদায় অভিশাপ” আবৃত্তি ছিলো শ্রোতাদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে মঞ্চস্থ হয় শাস্তি নাটক, যার নির্দেশনায় ছিলেন সৌমিক ঘোষ। নিম্নবিত্ত পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব এবং সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে নির্মিত নাটকটি দর্শকদের আবেগ ও চিন্তার জগতে নাড়া দেয়। মঞ্চব্যবস্থাপনা, আলোকসজ্জা এবং শব্দনিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন রাহুল গাঙ্গুলী, এ্যালেন যোশেফ ও অভিষেক।
শতাধিক শিল্পী ও স্বেচ্ছাসেবকের সহযোগিতায় প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী এই বিশাল আয়োজন প্রবাসী বাঙালিদের কাছে এক সাংস্কৃতিক তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়। অতিথি শিল্পীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান BSPC-র জ্যেষ্ঠ সদস্যরা। উপস্থিত সবাইকে জলযোগ ও নৈশভোজের মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয়।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন BSPC সভাপতি অশোক রায় এবং সাধারণ সম্পাদক তপস কুমার দে। তাঁরা শিল্পী, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও দর্শকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
Leave a Reply