দু’বছর পূর্বে বৃটিশ রাজনীতিক কিয়ের স্টারমার(Keir Starmer) তাঁর জীবনের গল্প/ইতিহাস লিখবেন বলে ঘোষনা দিলেন। এটি ছিলো অভূতপূর্ব ঘোষনা! বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীগন সচরাচর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে বায়োগ্রাফি লেখেননা। অত্যধিক সাহসিকতা এবং দাম্ভিকতা বটে! অত্যধিক আনাড়িও বটে! অবশ্যই এটি বেশি বেশি আমেরিকান হওয়ার মতো। আমেরিকান রাজনীতিক যাঁরা হোয়াইট হাউজে যেতে প্রত্যাশী তাঁরা তাঁদের শৈশবকালের বর্ননা পূর্বেই লিপিবদ্ধ করেন। যদিও সবার বারাক ওবামার মতো শৈশব ছিলোনা।
এরই মধ্যে প্রথম বৃটিশ লেবার পার্টি নেতৃত্বের সহায়তায় কিয়ের স্টারমার এর আন্তরিকতাপূর্ণ ধারাবাহিক পাঠযোগ্য বায়োগ্রাফী আসলো।
এই বায়োগ্রাফী পৃথিবীকে একজন বৃটিশ রাজনীতিক যিনি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দিয়েছে। কিভাবে একজন বেলুনের মতো ওপরে উঠছে এবং উঠছে এবং এক পর্যায়ে যখন বেলুনের লাগাম ছেড়ে দেয়া হয় তখন অকস্মাৎ দূর নীলিমায় অদৃশ্য হয়ে যায়। তিনি সততার সাথে তাঁর ওপরে উঠতে চাওয়ার স্পৃহা যাকে তিনি তাঁর সীমাবদ্ধতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এই বায়োগ্রাফীটি অনেকটা পুরুষোচিত, কার্যকরন সম্পর্কিত এবং ব্যবসায় ভাবাপন্ন হলেও অনেক অজানা তথ্যসম্বলিত।কিয়ের স্টারমার এই বায়োগ্রাফীকে তাঁর বাবার দুঃস্বপ্ন বলে অভিহিত করেছেন।
এই বায়োগ্রাফী যারা পড়বেন তারা তিনটি বিষয়ে অবাক বিস্ময়ে থামবেন। প্রথমতঃ তাঁর ৬১ বছর জীবনের কোনোকিছু প্রকাশ না করেই তিনি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী’র আসনের কতো কাছাকাছি ছিলেন; দ্বিতীয়তঃ তাঁর জীবন কতোটা বেদনার্ত ছিলো- তাঁর শিশুকালীন সময়ে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁর মায়ের ক্ষীণকায় শরীরের জন্য প্রচন্ড ব্যথায় সার্বক্ষণিক কাতরানো, কখনো কখনো তাঁর মাকে মৃতপ্রায় মনে হতো, বদমেজাজী বাবা, ভাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ওয়েস্টমিনিস্টার থেকে বহু দূরে হাসপাতালে থাকতেন যেখানে তিনি গোপনে তাকে ভিজিট করতেন, ভাতিজী নিজেকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রেখে নিজেকে নিজে ক্ষত-বিক্ষত করতো।
এই অসংযমী আবেগময় বয়সে অধিকাংশ লেবার পলিটিশিয়ান সহযোদ্ধাদের এই কথাগুলো হয়তো বলতো। এটি একেবারেই ওয়ার্কিং ক্লাস মানুষের জীবন-যুদ্ধ এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠার গল্প/জীবনীতিহাস।এই বায়োগ্রাফীর লেখক টম বাল্ডুইন প্রথমেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে কিয়ের স্টারমার এর গল্পের গভীরতা তিনি এখনও ছুঁতে পারেননি।
তৃতীয়তঃ কিয়ের স্টারমার ২০১৫ তে লেবারের সবচাইতে নিশ্চিত আসনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহন করে তিনি বলেছিলেন তিনি অকারন নিজের প্রশস্তি গাইছেন এবং তিনি অস্বস্তি অনুভব করছেন। তাঁর মতে ঐ আসনে লেবার পার্টির হয়ে যে কেউ জিততেন। তাঁর নিজের কোনো কৃতিত্ব ছিলো না।
এই বায়োগ্রাফী মূলত একজন সফল কীর্তিমান রাজনীতিকের বলে জনাব টম বাল্ডুইন দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেন। যদিও এই কীর্তিমান রাজনীতিক রাজনীতি পছন্দ করেন না বলে লেখক বলছেন।এই বৈপরীত্য সবকিছু বলে দেয়।
Leave a Reply