অস্ট্রেলিয়ায় ২৫ সংগঠনের উদ্যোগে সিডনিতে তৃতীয়বার বিজয়া সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর (শনিবার) এর তৃতীয় আয়োজনের আসর বসে সিডনির শহরতলী ক্যাম্পসির ওরিয়ন ফাংশান সেন্টারে। অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় ‘অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন ফর এথনিক অ্যাণ্ড রিলিজিয়াসমাইনোরিটিস ইন বাংলাদেশ’ (এএফএআরএমবি)-র উদ্যোগে, যা এই ২৫টি সংগঠনকে প্রতিনিধিত্ব করে।
দেবী দুর্গার উপাসনার মূল আহবানকে পুনরুচ্চারিত করে এই বিজয়া সম্মিলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ‘অশুভের বিনাশ হোক, শুচি হোক বিশ্বলোক’। সকল আসুরিক, দানবিক, অমানবিক শক্তির বিনাশ ঘটে বিশ্বে শান্তি, মঙ্গল ও শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হোক, এটাই প্রার্থনা।
এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাদেশিক ও ফেডারেল পর্যায়ের কয়েকজন এমপি ও মন্ত্রী, কমিউনিটির বিপুল সংখ্যক সদস্য, স্পন্সর ও মিডিয়া। বিকাল ৪টায় শুরু হয়ে রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে এই আনন্দঘন মহাসম্মিলন। সমগ্র অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রায় ২৫ টি সংগঠনের (মুখ্যতঃ নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের) সদস্য-সদস্যারা সপরিবারে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই আনন্দ ধারায় যুক্ত হয়ে প্রীত হন। এই মধুর সম্মিলনের উদ্দেশ্য ও আহবানের সাথেও তাঁদের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
যেসব সংগঠনের প্রতিনিধি বা সদস্যরা সশরীরে অংশগ্রহণ করতে পারেননি, তারা যথারীতি বিজয়ার শুভেচ্ছা বার্তা, পুজার ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছেন। এতে উপস্থিতি আংশিক ভার্চুয়াল হলেও অংশগ্রহণে পূর্ণতা পেয়েছে।
বিকাল ৫টায় তুষার রায় এবং অনন্যা ভট্টাচার্য ঋতু-র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরু হয় । কান্ট্রি অ্যাকনলেজমেন্ট, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া এবং পরমেশ ভট্টাচার্য ও অপু সাহার সমন্বয়ে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে ঢাক ও শঙ্খের মূখরিত বাজনার সাথে উলুধ্বনিতে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করে ‘রাধা কৃষ্ণ গৌড়ীয় মন্দির’-এর শিশুরা।
সম্মিলিত বিজয়া সম্মিলনের উদ্যোগে ও পরিকল্পনায় এবং আকাশ দে’র তত্ত্বাবধানে নির্মিত, এবছর সমগ্র অস্ট্রেলিয়ায় সকল পূজার ছবি, ভিডিয়ো এবং গত বছরের বিজয়া সম্মিলনের ছবিসহ একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। সেই সাথে বাংলাদেশের ঘটনাবলীর উপর আকাশ দে-র নির্মিত আরেকটি ভিডিয়োও প্রদর্শিত হয়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আনন্দ উৎসব পালন এবং সম্মিলিত শক্তিতে অশুভ শক্তিকে রুখে দেবার বার্তাও ছিল এসব ভিডিওতে, যা সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে।
এরপর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে দেবযানী রায়ের সঞ্চালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপিত হয় সদস্য সংগঠনের প্রযোজনায়। এএফএআরএমবি-র বিভিন্ন সংগঠন আলাদাভাবে এসব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করে, যার মাধ্যমে অশুভের বিনাশ ও মঙ্গলের আবাহন মূর্ত হয়ে ওঠে। এর মধ্যে ছিল, স্তোত্রপাঠ, কবিতা আবৃত্তি, গান ও নাচ।
অন্যান্যদের মধ্যে ফেডারেল পার্লামেন্টের সদস্য জুলিয়ান লীসার, প্রাক্তন সদস্য লরি ফারগুসন এবং হিন্দু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম পরিচালক শ্রীমতি শোভা দেশিকান উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা তাঁদের বক্তৃতায় বিজয়া পুনর্মিলনী ও দীপাবলির মতো অনুষ্ঠান আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আঁধার মুছে আলো, মূঢ়তা ছেড়ে জ্ঞান এবং অশুভ হেনে শুভ শক্তির আহবান ও প্রতিষ্ঠায় এএফএআরএমবি-র এই মহৎ উদ্যোগের সাথে তাঁরা সংহতি প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়ের উপর চলমান নির্যাতন বন্ধ করে তাদের অধিকার ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অতিথিরা আহবান জানান।
অতিথিরা আরও বলেন, এই সমন্বিত বর্ণিল ও প্রাণোস্ফূরণময় উৎসব পালন এই বহুজাতিক ও বহু সাংস্কৃতিক সমাজে নিশ্চিত ভাবেই প্রাণ ও প্রেরণা সঞ্চার করবে। আর অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামের এই প্রত্যয়ে সবাইকে যূথবদ্ধ হবার আহবান জানান।
এরপর উপস্থিত সকল সংগঠনের প্রতিনিধিগণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ও ঐক্য অটুট রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার পাশাপাশি বিশেষ আয়োজন ছিল বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী , কোলকাতার সারেগামাপা-খ্যাত ‘শিসপ্রিয়া’ অবন্তী সিঁথি এবং লন্ডন প্রবাসী সব্যসাচী শিল্পী অমিত দে’র মনোমুগ্ধকর সংগীত পরিবেশনা। তাদের বাংলা ও হিন্দী গানের পরিবেশনায় উপস্থিত সকলেই আনন্দিত ও তৃপ্ত হয়েছে।
শুধু বাঙালি কমিউনিটির উৎসব নয়, এই প্রদেশের একটি বর্ণিল ও প্রাণময় উৎসব ছিল এই আয়োজন, এমনটি বলেছেন উপস্থিত অনেক অতিথি। সকল বিচারে এই আয়োজন ছিল গুরুত্বপূর্ণ, ঋদ্ধ ও স্মরণীয়।
Leave a Reply