দুই দলের একের পর এক আক্রমণ, দুই দলের গোলরক্ষকের একের পর এক সেভ, দ্বিতীয়ার্ধে চোটে মেসি মাঠ ছাড়া, দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে গোল পেয়েও যেন পেল না আর্জেন্টিনা। কাগজে-কলমে ফাইনালটা লিখা না থাকলেও এমন টানটান উত্তেজনার ম্যাচকে ফাইনাল বলতে বাধ্য হতেন আপনিও। আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার মধ্যকার রোমাঞ্চকর এই ম্যাচটির ১১০ মিনিট পর্যন্তও স্কোরলাইন গোলশূন্য। দল দুটির ডাগআউট প্রস্তুত হচ্ছিল টাইব্রেকারের জন্যই। তবে লাওতারো মার্তিনেজের চমকটা যে তখনও ছিল দেখানোর বাকি। ১১২ মিনিটে বদলি নামা লো সোলসোর থ্রু পাস থেকে বল পেয়ে কলম্বিয়া গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন লাওতারো। শেষ পর্যন্ত সেই ১-০ ব্যবধানেই কলম্বিয়াকে থামিয়ে কোপায় টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা।
কোপায় এবারের শিরোপা দিয়ে ইতিহাস গড়ল মেসি-ডি মারিয়া। ২০২১ কোপার, ২০২২ বিশ্বকাপের পর এবার ২০২৪ কোপার শিরোপা, দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম কোনো দল হিসেবে টানা তিনটি বড় টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। বৈশ্বিকভাবে এই কীর্তি আর আছে কেবল স্পেনের। ২০০৮ ইউরো, ২০১০ বিশ্বকাপের পর ২০১২ ইউরোও জিতেছিল স্প্যানিশরা। এক যুগ পর এবার তাদের কীর্তিতে ভাগ বসাল আর্জেন্টিনা।
আসরের গ্রুপপর্বে আর্জেন্টিনার দাপট ছিল এই লাওতারোকে ঘিরেই। সেখানে তিন ম্যাচে আর্জেন্টিনার মোট গোলের সংখ্যা ছিল ৫, যার মধ্যে লাওতারোই করেছিল ৪টি। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিতে পেয়েছিলেন না গোলের দেখা। তাতে অবশ্য খুব একটা কষ্ট পাওয়ার কথা না এই ইন্টার মিলানের ফরোয়ার্ডের। কেননা ফাইনালে দলের যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখনই গোল করলেন লাওতারো। জেতালেন দলকে। হয়ে থাকলেন ইতিহাস গড়ার সাক্ষী।
মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল অনেকটা কলম্বিয়ার দখলেই। শুরু থেকে তারা চালিয়েছে একের পর এক আক্রমণ। তবে কাউন্টার অ্যাটাকে খুব একটা সফল হতে পারেনি আর্জেন্টিনা। তারা বলার মতো সুযোগ পায় ম্যাচের ২০ মিনিটে। দারুণ এক আক্রমণ শেষে আনহেল ডি মারিয়ার বাড়ানো বল খুঁজে পায় বক্সের ভেতরে থাকা মেসিকে। তার শট একাধিক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে শেষমেশ চলে যায় কলম্বিয়া গোলরক্ষক কামিলো ভারগাসের হাতে।
ম্যাচের ৩৩তম মিনিটে আলবিসেলেস্তেদের গোলপোস্ট বরাবর দূরপাল্লার দারুণ এক শট নেন জেফারসন লেরমা। তবে সেটি ঠেকিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। সেখানে পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের ৩৬ মিনিটে বল নিয়ে লিওনেল মেসি ঢুকে পড়েছিলেন কলম্বিয়া বক্সে। সেখানে সান্তিয়াগো আরিয়াসের বুট লাগে তার ডান পায়ের গোড়ালির একটু ওপরে। এতে বেশ কিছুক্ষণ মাঠের বাইরে থাকতে হয় তাকে। সেখান থেকে প্রথমার্ধেই শেষ পর্যন্ত খুড়িয়ে খুড়িয়ে খেলেছেন এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা।
সেই চোট নিয়েই দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নামেন মেসি। এবার কিছুটা স্বাভাবিক দেখা যায় তাকে। তবে শঙ্কা তখনও ছিল। সেটিই সত্যি হয়ে গেল ম্যাচের ৬৬তম মিনিটে। কলম্বিয়ার আক্রমণের জবাবে প্রেস করতে দিয়ে ডান পায়ে টান পান মেসি। এবার আর খেলা চালিয়ে যেতে পারলেন না। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে ছাড়লেন মাঠ। অনেকটা নিশ্চিতভাবেই এই তার শেষ কোপা ম্যাচ। এই আর্জেন্টাইন মহাতারকার বদলে সেখানে মাঠে নামেন নিকো গঞ্জালেস।
মাঠে নেমে মিনিট দশেক না পেরোতেই দলকে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত উপহার দেওয়ার দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছিলেন গঞ্জালেস। সতীর্থের পাস পেয়ে ম্যাচের ৭৫তম মিনিটে বল জড়িয়ে দেন জালে। পুতবে সঙ্গেই উঠে যায় সাইডলাইন রেফারির ফ্ল্যাগ এবং রেফারির অফ-সাইডের বাঁশি।
সেখান থেকে ম্যাচের মূল ৯০ মিনিট পর্যন্ত আরও কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল দুই দলের আক্রমণভাগের ফুটবলাররা। তবে কাঙ্ক্ষিত সুযোগ তৈরি করতে না পারায় গোলশূন্য ব্যবধানে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শেষে ম্যাচ যায় অতিরিক্ত সময়ে।
Leave a Reply