৮ বছর আগে ১ জুলাই হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় স্তব্ধ হয়েছিল গোটা দেশ। গুলশানের রেস্তোরাঁয় নব্য জেএমবির হামলায় প্রাণ যায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনের। প্রতিবছর দিনটিতে শোক পালন করে ইতালি, জাপান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।
১ জুলাই, ২০১৬। গুলশান-২ নম্বর এর ৭৯ নম্বর সড়কে লেকের তীরে হলি আর্টিজান বেকারি। যার সবুজ লন আর খাবার ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই প্রিয়। গুলশানে বসবাসরত বিদেশি কূটনীতিক, ব্যবসায়ী কিংবা চাকরিজীবী, সেই রেস্তোরাঁয় হরহামেশাই যেতেন।
রোজার ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে সেই রাতে অস্ত্র নিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে নৃশংসতা শুরু করে পাঁচ জঙ্গি। খবর পেয়ে ছুটে যান গুলশান থানা পুলিশের সদস্যরা। মুহূর্তেই পুলিশের ওয়্যারলেসে ছড়িয়ে পড়ে। জবাই করে এবং গুলি চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নব্য জেএমবির সদস্যরা। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা গুলি চালানোর পাশাপাশি গ্রেনেড ছোড়েন। তাতে আহত হন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
শেষে কমান্ডো অভিযানে জঙ্গিদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অবসান হয় ভয়ংকর সেই রাতের। কমান্ডোদের নেতৃত্বে অপারেশন ‘থান্ডারবোল্ট’ এর মধ্য দিয়ে হলি আর্টিজানের জিম্মিদের মুক্ত করা হয়। অভিযানেই নিহত হয় হামলায় অংশ নেয়া পাঁচ তরুণ।
এর ২৫ দিন পরেই রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজ বাড়ি বলে পরিচিত একটি ভবনে গড়ে তোলা জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় সিটিটিসি। সেখানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। এরপর একে একে পরিচালিত হয় নারায়ণগঞ্জে অপারেশন হিট স্টর্ম-২৭, গাজীপুরের পাতারটেকে অপারেশন স্পেড-৮, সিলেটে অপারেশন টোয়াইলাইটসহ অনেকগুলো অভিযান।
হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় করা মামলার তদন্ত করে ঢাকার সিটিটিসি। ২১ জনের সম্পৃক্ততা পায় তদন্ত সংস্থাটি। এর মধ্যে পাঁচ জঙ্গি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অভিযানে নিহত হয় আরও আটজন। জীবিত বাকি আটজনকে আসামি করে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এক বছর পর মামলার রায়ে, আট আসামির সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। পরে ২০২৩ সালের অক্টোবরে সাত জঙ্গির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ইতালি, জাপান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ১৭ নাগরিক। প্রতি বছর ১ জুলাই নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিদেশি কূটনীতিকরা। সে ধারাবাহিকতায় সোমবার এক শোকসভার আয়োজন করেছে ঢাকার ইতালি দূতাবাস।
Leave a Reply