সকালে খণ্ডকালীন যে বাজার বসে বাসার কাছে সেখানে তন্নতন্ন করে এমাথা ওমাথা করেও সাধের এঁচোড়ের দেখা না পেয়ে বৌদ্ধ মন্দিরের গা ঘেঁষে বসা একটা বারোমিশালী দোকান দেখে এগিয়ে গেলাম….
কিন্তু হতাশ হয়ে বললাম কাঁঠাল আনেন না?
স্মিত হেসে দোকানী বলল একটু পরে আসবে…..
কিছুক্ষণ পর গিয়ে ৫০ টাকা কেজি দরে ৯০ টাকা দিয়ে একটা এঁচোড় নিয়ে আসতে আসতে নানা হাবিজাবি কথার ভিড়ে হঠাৎ মনে হলো এই কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফলের জায়গা দখল করে আছে স্বমহিমায় অথচ শতকরা ৫০ জন লোকের মুখে একই কথা কাঁঠালের গন্ধ সহ্য হয়না!
যে ৫০ জন খায় তাদেরও পছন্দের ভিন্নতা রয়েছে, কেউ কেউ খেতে হয় তাই বছরে দু’ একদিন খায় তাও নামে মাত্র!
কারো পছন্দ রসালো, কারো বা খাজা!
তবে এই কাঁচা কাঁঠাল / এঁচোড়ের তরকারি কিন্তু কম বেশী সবারই পছন্দ!
অবশ্য অঞ্চল ভেদে। কারণ অনেকেই এই রান্না সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ….
তবে এই খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারগুলো বাদ দিয়ে অন্য দিকে চোখ ফেরাতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাবে ভাবিনি এমন করে!!
বাংলা ভাষা সাহিত্যে কাঁঠাল ( ফল)শব্দের এত বহুবিধ ব্যাবহার অন্য কোন ফলকে নিয়ে হয়েছে কিনা জানিনা!!
গান, কবিতা, প্রবাদ, বাগধারা সহ অন্য ফুল – ফলের সাথে সংযুক্তি, রসনা তৃপ্তিতে হরেক রকমের প্রণালী ;
বাংলা সাহিত্যে এই শব্দের যে নানা অর্থে সংযোজন সত্যি ভাবলে অবাক হতে হয়!
আর আমিও এভাবে ভাবিনি কখনো…..
তোমরা যেখানে সাধ চ’লে যাও– আমি এ বাংলার পারে
র’য়ে যাব; দেখিব কাঁঠাল পাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে ;
কিংবা
আম্মা বলে পড়রে সোনা, আব্বা বলে মন দে…
রাতে আমার ঘুম আসে না কাঁঠালচাঁপার গন্ধে!
বা
লোকে বলে কাঁঠাল সে পাকে নাকি কিলিয়ে,
বুদ্ধি পাকিয়ে তোলে লেখাপড়া গিলিয়ে….
গোলেমালে গোলেমালে পিরিত কইরো না
পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পড়ে ছুটবে না!
সর্ব ঘটে কাঁঠালী কলা।
ইঁচড়েপাকা, কাঁঠালের আমসত্ত্ব…
একটা শব্দ দ্বারা বহু বোধক অর্থ প্রকাশ ছাড়াও এই বৃক্ষের মায়াবী ছায়া, সুশীতল বাতাস, মূল্যবান কাঠ আামাদের জীবন ও সংস্কৃতিকে করেছে বহুলভাবে উপকৃত ও সমৃদ্ধ!
যথাযথ নির্ধারণ আমাদের জাতীয় ফল ” কাঁঠাল “।
কারো কি সংশয় আছে? আমার কিন্তু নাই….
তোমরা কি ভাবতাছো আমি কাঁঠালপাতা খাইয়া বড় হইছি!!
হা হা হা.……
যা ভাবে ভাবুক লোকে ভাবতে থাকুক…
আপাতত ” আজকের রেসিপি গাছ পাঁঠার ( এঁচোড়) নিরামিষ কালিয়ায় ” হোক দুপুরের ভূরিভোজন…..
প্রণালী :-
এঁচোড় বড় টুকরো করে কেটে নিতে হবে। দুটো মাঝারি আলু ডুমো করে কেটে রাখতে হবে।
সাথে একটা বড় টমেটো কুচি ও দুটে পেঁয়াজ কুচি।
এবারে এঁচোড় ধুয়ে নুন হলুদ দিয়ে সামান্য ভাপ দিয়ে জল ঝড়িয়ে নিতে হবে।
কড়াই চাপিয়ে পরিমাণ মত তেলে প্রথমে আলু ভেজে তুলে সেই তেলে এঁচোড় গুলো হালকা ভেজে তুলে নিয়ে সেই তেলে সামান্য ঘি ও তেল মিশিয়ে একটু গোটা জিরা, দুটো এলাচ, দারচিনি ও তেজপাতা ফোরন দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে লাল করে ভেজে তাতে একে একে ২ চা চামচ আদা বাটা, জিরা বাটা/ গুড়া, ধনে গুড়া, মরিচ গুঁড়ো, সামান্য কাশ্মীরি মরিচের গুড়া ও পরিমাণ মত হলুদ দিয়ে নেড়ে টমেটো কুচি ও স্বাদমতো নুন দিয়ে কসিয়ে এবার তাতে আগে থেকে বেটে রাখা ১ টেবিল চামচ কাজু বাদম দিয়ে নেড়ে এবার দুই টেবিল চামচ টক দৈ ফেটিয়ে ঢেলে দিয়ে তেল বের হয়ে আসা পর্যন্ত কসিয়ে, এবার ভেজে তুলে রাখা এঁচোড় ও আলু দিয়ে ভালো করে নেড়ে পরিমাণ মত গরম জল দিয়ে চাপা দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করে সিদ্ধ হয়ে গেলে সামান্য চিনি, গরম মশলা ও ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিলেই এঁচোড়ের কালিয়া রেডি।
নিরামিষ দিনে ( সনাতনীরা) পিঁয়াজ ছাড়াও করতে পারেন।
আবার পিঁয়াজের সাথে রসুন দিলেও মন্দ লাগে না!
Leave a Reply