শিশুর (১-৮ বছর বয়সী) ভাল আচরন উদ্বুদ্ধ করার কিছু কৌশল:
আজকাল অনেক বাবা মা শিশুদের মেজাজ এবং আচরণ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। অন্যদের সাথে কি ধরণের আচরণ করা উচিৎ তা আসলে শিশু কিন্তু তার কাছের মানুষদের কাছ থেকেই শিখে,মূলত বাবা মায়ের কাছ থেকে। শিশু ভাল আচরণ করা তখনি শিখবে, যখন আপনি তাকে ইতিবাচকভাবে গাইড করতে পারবেন। এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা বিষয় হচ্ছে, শিশুর খারাপ আচরণের চেয়ে ভাল আচরনের দিকে এটেনশন দেখানো।
Raising children নামক একটা প্যারেন্টিং ওয়েবসাইট এর কতগুলো টিপস আমার কাছে খুবই যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে।যেহেতু বাচ্চাদের সাথে আমি কাজ করি,এই টিপস গুলি আসলেই কাজ করে বলে আমার অভিজ্ঞতা বলে। আপনারা চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
১.নিজে রোল মডেল হোন: আপনার নিজের ব্যবহার দিয়ে শিশুকে গাইড করার চেষ্টা করুন। আপনি কি বলছেন তার চেয়ে আপনি কি করছেন তা কিন্তু শিশু খুব বেশী খেয়াল করে।যেমন: আপনি যদি চান আপনার শিশু অন্যের কাছ থেকে কোন জিনিস নিলে ধন্যবাদ দিক, উচ্চস্বরে কথা না বলুক, তাহলে আগে নিজে ওগুলি চর্চা করুন, ওর সামনে অন্যকে ধন্যবাদ দিন, আস্তে আস্তে কথা বলুন।
২.ওর আচরণে আপনার মনে কি হচ্ছে তা ওকে বলুন: শিশুকে সততার সাথে বলুন আপনি কি অনুভব করছেন। ‘আমি’ কথাটা দিয়ে বাক্য শুরু করুন,এতে শিশু আপনার তরফ থেকে ব্যপারটা নিয়ে চিন্তা করবে। যেমন বাচ্চা খুব চেঁচামেচি করছে, আপনি হয়তো কারো সাথে ফোনে কথা বলছেন। “এত জোরে কথা বলনা” না বলে আপনি বলতে পারেন,”আমার খুব মন খারাপ লাগছে,তুমি এত জোরে কথা বলছ যে,আমি ফোনে কিছুই শুনতে পারছিনা।”
৩.আপনার শিশুর ভালটাকে ‘ক্যাচ’ করুন:
যখনি আপনার শিশু আপনার মনমত কিছু একটা করে,সাথে সাথে তাকে একটা পজিটিভ কথা বলুন। যেমন: “বাহ তুমি তো খুব সুন্দর করে খেলছ আজকে, এই যে তুমি সব ব্লকগুলি টেবিলে রেখেছ তা আমার খুব ভাল লেগেছে।” অথবা, “তোমার ভাই এর সাথে মিলেমিশে খেলছ, এটা খুব ই ভাল, আমার খুব ভাল লাগছে।” ব্লকগুলি ছুড়ে ফেলা শুরু করার আগেই বা ভাইয়ের সাথে মারামারি শুরুর আগেই যদি আপনি এই ম্যাসেজটা ওকে দিতে পারেন,নিশ্চিতভাবে তা বেশী কাজ করবে!
৪.শিশুর লেভেলে গিয়ে কথা বলুন: শিশুর যত কাছাকাছি যাওয়া যায় ততই সহজে বোঝা যায় ওর কি সমস্যা হচ্ছে।কাছে গিয়ে কথা বললে শিশুও বুঝতে পারে আপনি তার আচরণ সম্পর্কে আসলে কি বলতে চাচ্ছেন।কাছাকাছি গেলে ও আপনার দিকে না তাকালেও আপনি ঠিকই তাকে আপনার দিকে মনযোগী করতে পারবেন।
৫.শিশুর কথা মনযোগ দিয়ে শুনুন: যখন শিশু কিছু বলে, মাথা নেড়ে বা কোন শব্দ করে বা তার কথা রিপিট করে তাকে বোঝাতে পারেন, আপনি তার কথা শুনছেন এবং তার কি অনুভূতি হচ্ছে তা আপনি বুঝতে পারছেন। যেমন,সে হয়তো ব্লক দিয়ে টাওয়ার বানাচ্ছিল কিন্তু তা বারবার ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং সে তা আপনাকে বলার চেষ্টা করছে। তখন আপনি তার কাছাকাছি গিয়ে বলতে পারেন, ” আমি বুঝতে পারছি, ব্লকগুলি বারবার পড়ে যাচ্ছে দেখে তোমার খুব খারাপ লাগছে।” এর ফলে ছোট শিশুরা অনেক সময় কোন কাজ মনমত না হওয়ার টেনশনটা নিতে পারে এবং ফ্রাস্টেটেড হয়ে অনাকান্খিত আচরণ শুরু করার আগেই নিজেকে অনেকখানি সামলে নেয়।
৬. আপনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন: যখন আপনি আপনার দেওয়া কথা রাখবেন, শিশু আপনাকে সম্মান ও বিশ্বাস করা শুরু করবে। সেটা কোন পুরস্কার বা ডিসিপ্লিন এর জন্য কোন একশন, যাই হোক না কেন।যেমন, আপনি যদি বলেন, সে খেলনা গুছিয়ে রাখলে তাকে নিয়ে আপনি পার্কে বেড়াতে যাবেন, তাহলে সে গুছানো শুরু করলে আসলেই পার্কে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। আপনি হয়তো দেখলেন, আপনার শিশু শপিং সেন্টারে গিয়ে দৌড়াচ্ছে।আপনি যদি বলেন, সে দৌড়ানো বন্ধ না করলে আপনি বাসায় চলে যাবেন,তবে তাই করুন, আপনার কথায় স্হির থাকুন।
Leave a Reply