এমন বর্ণাঢ্য, সম্মানে মোড়ানো অন্তিম যাত্রা কেউ কখনও দেখেনি। ঝড়-বৃষ্টি আর চোখের জলে নিউইয়র্ক এক বীর সন্তানকে চির বিদায় জানালো। ভয়াবহ বন্দুক হামলায় নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের জানাজায় অংশ নিয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার এলাকায় অনুষ্ঠিত জানাজায় শুধু নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের সদস্যই ছিলেন প্রায় ৫ হাজার। রাস্তার ধারে সারিবদ্ধ হাজারও পুলিশ সদস্য তাকে শেষবারের মতো স্যালুট জানান। আকাশপথেও হেলিকপ্টার থেকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। জানাজা শেষে দিদারুলকে দাফন করা হয় নিউ জার্সির লোরেল গ্রোভ কবরস্থানে।
দিদারুল ইসলামকে মরণোত্তর প্রথম শ্রেণির ডিটেকটিভ হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ। এতে তার পরিবার সর্বোচ্চ পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন।
গভীর শ্রদ্ধা ও শোকের আবহে আয়োজিত এই অন্তিম বিদায়ে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কের গভর্নর, সিটি মেয়র, পুলিশ কমিশনার, আইনপ্রণেতা, কমিউনিটির বিশিষ্টজন ও আসন্ন মেয়র নির্বাচনের প্রার্থীরাও। তাদের বক্তব্যে বারবার উচ্চারিত হয় দিদারুলের সাহসিকতা, আত্মত্যাগ এবং তার শেকড় বাংলাদেশের নাম।
গত সোমবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউতে দায়িত্ব পালনকালে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হন ৩৬ বছর বয়সী পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামসহ আরও ৪ জন। হামলাকারী ২৭ বছর বয়সী শ্যেন ডেভন তামুরা পরে নিজেও আত্মহত্যা করে।
চার বছর আগে এনওয়াইপিডিতে যোগ দেওয়া দিদারুল ইসলাম এর আগে স্কুল সেইফটি ও ট্রাফিক বিভাগে কাজ করেছেন। তার বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক, আর তার স্ত্রী বর্তমানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে চলা বন্দুক সহিংসতা। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালেই এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২৫৪টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন শত শত মানুষ।
দিদারুল ইসলামের আত্মত্যাগ আজ শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের নয়, পুরো নিউইয়র্ক শহরের গর্ব ও বেদনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।