শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই সত্য হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তামিম ইকবাল। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সাবেক অধিনায়ক নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেন। আজ বুধবার সকাল দশটার দিকে তিনি মিরপুরে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়ান। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়, আর দুপুর ২টায় প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত তালিকা।
আজ সকাল ১০টা দিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি অফিসে হাজির হন তামিম। তারপরই প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন এই তারকা ক্রিকেটার।
এনিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ক্ষোভ ছিল তামিমের মনে। বিসিবি কয়েকটি ক্লাবকে কাউন্সিলরশিপ না দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এবার চূড়ান্ত যাচাই বাছাই শেষ মনোনয়ন টিকে গেলেও স্বেচ্ছায় বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন।
ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব থেকে ভোটার হয়েছেন তামিম। অবশ্য কাউন্সিলর হওয়ার খবর ছড়িয়েছিল তিনি পরিচালক পদে প্রার্থী হবেন। এমন কী বোর্ড প্রেসিডেন্টও হতে চেয়েছিলেন সাবেক এই অধিনায়ক। কিন্তু নানা জটিলতার মুখে শেষ অব্দি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন তিনি। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় বোর্ডে যাওয়া হচ্ছে না তার।
কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে বিসিবি নির্বাচনে নানা ইস্যুতে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেন তামিম। সংবাদ সম্মেলন করে এনিয়ে ক্ষোবও প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় তামিম একা নন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিনে ক্লাব ক্যাটাগরির (২) অনেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছেন। যাতে বিসিবি নির্বাচন আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পথে।
আগামী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য বিসিবি নির্বাচন তিনটি ক্যাটাগরিতে হবে। জেলা ও বিভাগ থেকে ১০ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন ৭১ জন কাউন্সিলরের ভোটে, ক্লাব ক্যাটাগরিতে ৭৬ জন কাউন্সিলরের ভোটে নির্বাচিত হবেন ১২ জন, আর বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থাভিত্তিক তৃতীয় ক্যাটাগরিতে ৪৫ ভোটারের মধ্যে থেকে একজন পরিচালক নির্বাচিত হবেন। এরপর মোট ২৫ পরিচালক ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন নতুন সভাপতি।
কিন্তু পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে ১৫টি ক্লাবকে কেন্দ্র করে। ম্যাচ না খেলেই তারা তৃতীয় বিভাগ অতিক্রম করেছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম ধরা পড়লেও শেষ পর্যন্ত আপিলের মাধ্যমে এই ক্লাবগুলো আবারও ভোটার তালিকায় জায়গা পায়। রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে সমঝোতার কারণে প্রকৃত সংগঠকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। বাদ পড়া অভিজ্ঞ ও সক্রিয় ক্লাব প্রতিনিধিরা এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন। এতে ভেতরেই দ্বন্দ্ব তৈরি হয় তামিমপন্থীদের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্লাব সংগঠকরা যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেন, তবে ১২টি আসনেই নির্বাচন করার দাবি থেকে তারা সরেননি। এর ফলে উপদেষ্টার পছন্দের কয়েকজন প্রার্থীর বোর্ডে আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এই অচলাবস্থার মাঝেই শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান তামিম ইকবাল। তার এই সিদ্ধান্ত বিসিবি নির্বাচনের চিত্র বদলে দিয়েছে। এখন নির্বাচন ঘিরে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।