সংক্ষেপে, হিজাব হচ্ছে হেডস্কার্ফ যার ভিন্ন অর্থ রয়েছে।
চার্লস স্টুয়ার্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিস এন্ড সিভিলাইজেশন বিভাগের অধ্যাপিকা জুলিহা কেসকিন বলেন, “ হিজাব হচ্ছে আধ্যাতিকতার মোড়ক বা চাঁদরের প্রতিরক্ষা যা’ একজনকে নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরী করে। প্রতিরক্ষা দেয় আল্লাহর সাথে আধ্যাত্বিক সংযোগে বাধা তৈরীর বিরুদ্ধে।”
ডঃ কেসকিন আরও বলেন, “মাথার অংশ পোশাকে আবৃত করে মানুষ তাদের আচরন, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধেরও প্রকাশ ঘটাতে পারেন।”
হিজাব পরিধানের উদ্দেশ্য কি?
হিজাব পরিধান ইসলামে স্বাভাবিকতা এবং বিনয় প্রকাশের মাধ্যম এবং বয়োঃসন্ধিকালে হিজাব পরিধানের ঐচিত্য রয়েছে।
ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে এ সংক্রান্ত দু’টি আয়াত রয়েছেঃ
প্রথমঃ পুরুষ যখন নারীর দিকে তাকাবেন তখন তাদের নজর নীচু করতে হবে যা’ চোখের হিজাব হিসেবে পরিচিত।
দ্বিতীয়ঃ মহিলাদের পোশাক স্বাভাবিক হবে এবং তাদের পোশাকে তাদের শরীর আবৃত থাকতে হবে – অনেকের মতে চুল দেখা যাবেনা। অধ্যাপিকা ডঃ কেসকিনের মতে পুরুষ বা মহিলা পারষ্পরিক যোগাযোগে নৈতিকতা এবং ইসলামিক মূল্যবোধের বিষয়টি স্মরণে রাখবেন।
হিজাব বনাম বুরকাঃ
চার্লস স্টুয়ার্ড ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার অধ্যাপক হাকান কোরাহ’র মতে হিজাব হচ্ছে এক খন্ড কাপড় যা’ দ্বারা মুসলিম মহিলাগন তাদের মাথার স্কার্ফ হিসেবে চুল এবং গলা আবৃত করেন। তবে কিভাবে পড়বে সেটা সংশ্লিষ্ট দেশের কৃ্ষ্টি এবং সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে।
অপর দিকে হিজাব ছাড়া রয়েছে বুরকা যা’ মহিলাদের মাথাসহ পুরো শরীর আপাদ-মস্তক ঢেকে দেয়। শুধুমাত্র দু’টো চোখের জন্য বাইরে দেখতে সাহায্য করে এমন জানালা থাকে।
রয়েছে জিলবাব যা’ একইভাবে শরীরের বহিরাবরন ঢেকে দেয়; সাথে অবশ্য নিকাব থাকে যেটি মাথার চুলসহ পুরো মুখমন্ডল ঢেকে দেয়।
হিজাবের মতোই রয়েছে খিমার তবে হিজাবের থেকে বড় যা’ মাথা এবং মুখমন্ডলসহ শরীরের ওপরের পুরোটা ঢেকে রাখে।
কেনো মুসলমান মহিলারা তাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখেন?
অধিকাংশ মুসলিম পন্ডিতগণ মনে করেন মুখমন্ডল ঢাকতে নিকাব কিম্বা বুরকা পরিধান বাধ্যতামূলক নয়। এটা অনেকেই তাদের আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রকাশে পরিধান করে থাকেন।
কিছু ইসলামিক পন্ডিত বিশেষ করে আফগানি তালিবান বুরকা এবং নিকাবকে হিজাবের বাধ্যতামূলক অংশ মনে করেন।
মহিলারা হিজাবের অংশ হিসেবে শুধু হেডস্কার্ফ পরিধান করবেন না বুরকা এবং নিকাবও পরিধান করবেন এ বিষয়ে কি তাদের স্বাধীনতা রয়েছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রে পন্ডিতগনের উক্তি হচ্ছে ‘হ্যাঁ।’
মুসলিম জার্নালিস্ট সাজমা গাফুর বলেন মহিলাদের এ বিষয়ে স্বাধীনতা নেই সেটি একটি ভুল ধারনা।
তাঁর মতে প্রায়শই মহিলাদের ওপর জোর এবং শক্তি প্রয়োগ করে হিজাব পরিধানে বাধ্য করার ঘটনা রয়েছে।
পশ্চিমের দেশে মহিলারা কি পোশাক পরিধান করবেন সেটা তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত গ্রহন করে থাকেন।
সাজমা ২০ বছর বয়স থেকে হিজাব পরিধান করেন এবং এখন সেটি তার পরিধেয় বস্ত্রের অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে।
এটি তার নিজের জীবনের ব্যক্তিগত বিষয় ছিলো এবং আছে।
সাজমা তার আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, বিনয় এবং আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপনে হিজাব পরিধান করে থাকেন।
মুসলিম লেখিকা অমল আওয়াদ হিজাব পরিধান করেননা। তিনি মনে করেন হিজাব পরিধান করা না করা একেবারেই মহিলাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। পশ্চিমা দেশে মুসলিম ব্যতীত অন্যেরা হিজাব পরিধান করেননা তাই চয়েজেরও ব্যাপার নেই। আবার মুসলমান দেশে মহিলাদের চয়েজই নেই।
পশ্চিমের দেশে বসবাসরত মুসলিম মহিলাদের অবশ্য হিজাব পরিধান করা না করার চয়েজ রয়েছে।
হিজাবী মহিলারা কি নিজেদেরকে সমাজে এম্পাওয়ার্ড মনে করেন?
হ্যাঁ, অনেক মহিলাই হিজাব পরিধান করেই নিজেদেরকে এম্পাওয়ার্ড মনে করেন।
সাজমা বলেন প্রথমেই তিনি হিজাব পরিধান করে নিজেকে এম্পাওয়ার্ড এবং স্বাধীন ফিল করেন।
মানুষ তার সাথে বরং সম্মান প্রদর্শন করে কথা বলতে শুরু করেন।
একজন কেনো হিজাব পরিধান করেন তা’ কি জিজ্ঞেস করা উচিত?
এটার সরাসরি কোনো উত্তর নেই। এটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। যদিও সাধারনত মুসলিম মহিলারা বলে থাকেন
হিজাব সংক্রান্ত প্রশ্নে তারা কিছু মনে করেননা। তবে যখন কেউ হিজাবীদের সম্পর্কে অনুমান করে কথা বলেন যেমন, তাদের গরম লাগে কি-না তখন তারা বিরক্ত হতে পারেন।
এই প্রশ্নে হিজাবীরা আবার অনুমান করতে পারেন যে তাদের পরিবেশ এবং আবহাওয়া সম্পর্কে সচেতনতা নেই।
মুসলিম মহিলারা কখন হিজাব খুলেন?
অনেকে মনে করেন তারা বোধ হয় ২৪ ঘন্টাই হিজাব পরিধান করে থাকেন। এটি একটি ভুল ধারনা।
বাস্তবে একজন মহিলা তার স্বামী, রক্তের সম্পর্কের বাইরের কারো সংগে দেখা করতেই হিজাব পরিধান করেন। অন্য সময়ে পরিধান করতে হয়না। এমনকি পাবলিক প্লেসে যদি শুধুমাত্র মহিলারা থাকেন সেখানেও হিজাব পরিধান করতে হয়না। তবে পাবলিক প্লেসে অনেকে পুরুষ না থাকা সত্বেও কোনো কোনো মহিলা কভার্ড থাকেন।
এবিসি টিভির House of Gods ড্রামা সিরিয়ালে আমরা শুধুমাত্র মহিলাদের পুলে বা বাড়ীতে আমরা বাটুল এবং জামিলাকে হিজাব পরিধানরত দেখতে পাইনা।
কোনো একটি এপিসোডে বাটুল এবং তার বোন হিন্ড তাদের পরিবারের বাইরের একজন পুরুষকে দেখতে স্কার্ফ পরিধান করেন।
কিছু কিছু মহিলারা হিজাব পরিধান করেননা কেনো?
ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে হিজাব পরিধানের প্রয়োজনীয়তার কথা আছে কিন্তু বাধ্যবাধকতার কথা নেই। অর্থাৎ, এখানে পরিধান করা না করার চয়েজ রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তাই তারা পরিধান করেননা।
ডি-জ্যাবিং (De-jabbing) কি?
হিজাব একেবারেই পরিধান না করা হচ্ছে ডি-জ্যাবিং।
বহু মুসলিম মহিলাদের জন্য হিজাব পরিধান সুন্দর আধ্যাতিক সাধনার যাত্রা যখন সবার জন্য নয় বা সবাই একমত নয়।
যেমন, অমল প্রথম ১০ বছর হিজাব পরিধানের পর হিজাব পরিধান না করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং হিজাব খুলে ফেলেন। কারন হিসেবে অমল বলেন হিজাবে তাকে অন্য মানুষ মনে হয়। যদিও তার হিজাব খুলে ফেলায় তিনি সমালোচিত হোন।
অমল মনে করেন হিজাব শুধুই স্কার্ফ নয়, এটি একটি আলাদা পরিচিতি যা’ পশ্চিমা সমাজ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্নতা তৈরী করে বলে তিনি মনে করেন। এমনকি অনেকেই তার সাথে আলোচনায় হিজাব পরিধানের যথার্থতা খুঁজে পাননা বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
Leave a Reply