২০২৫ সালের ৩ আগস্ট, রবিবার সিডনির হার্বার ব্রিজ জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বৃহৎ জনবিক্ষোভ,যা গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে এবং মানবিক সহায়তার আহ্বানে আয়োজন করা হয়। “March for Humanity” নামের এই প্রতিবাদে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ, রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার সংগঠন, শ্রমিক ইউনিয়ন, আদিবাসী ও প্রবাসী সম্প্রদায়।
প্রথমদিকে নিউ সাউথ ওয়েলস (NSW) পুলিশ মিছিলে অনুমতি না দিলেও, আয়োজকরা আদালতের দ্বারস্থ হন। NSW সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বেলিন্ডা রিগ এই মিছিলে শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে অনুমতি দেন। তাঁর রায়ে বলা হয়, গণতান্ত্রিক সমাজে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং এটি জনস্বার্থের পরিপন্থী নয়।
প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বব কার, ফুটবল তারকা ক্রেইগ ফস্টার, গ্রিনস পার্টির সেনেটর মেহরিন ফারুকি, অভিনেতা মেইন ওয়ায়াট, এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এড হুসিকসহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। বক্তৃতায় তাঁরা গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানান এবং অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে আহ্বান জানান যেন তারা ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেয় এবং যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেয়।
প্রতিবাদের ভিড় এতটাই বিশাল ছিল যে পুলিশ পরে নিরাপত্তার কথা তুলে ধরে মিছিল বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ হেলিকপ্টার ও মেসেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘোষণা দেয় যে, ব্রিজে ভিড়জনিত দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। আয়োজকরা এই ঘোষণাকে শান্তভাবে মেনে নেন এবং অংশগ্রহণকারীদের ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শহরের ট্রাফিক ও গণপরিবহন ব্যবস্থা কয়েক ঘণ্টা ব্যাহত হয়। মিলসনস পয়েন্ট স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ট্রেন ও বাস চলাচলে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়।
এদিকে একই দিনে মেলবোর্নেও প্রতিবাদকারীরা কিং স্ট্রিট ব্রিজ অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। যদিও পুলিশ সেখানেও প্রস্তুত ছিল এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এই প্রতিবাদ শুধু একটি মানবিক আহ্বান নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক বার্তাও, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা সরকারকে জানান দিচ্ছে যে, তারা ন্যায়বিচার ও মানবিকতার পক্ষে দাঁড়াতে চায়। “গাজা জেনোসাইড বন্ধ করো”, “ফিলিস্তিন মুক্ত হোক” এমন স্লোগান, পতাকা ও ব্যানারে মুখরিত হয়ে ওঠে ব্রিজের প্রতিটি ধাপ।
NSW সরকারের পক্ষে মিছিলকে “ভুল সময় ও স্থান” হিসেবে অভিহিত করা হলেও আদালতের রায় ও জনসমর্থন প্রমাণ করেছে অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিবাদের অধিকার এখনো জীবিত এবং সক্রিয়। সংগঠকরা বলছেন, এটি ছিল কেবল শুরু। অদূর ভবিষ্যতে আরও বড় ও বিস্তৃত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অস্ট্রেলিয়ার এই আন্দোলন বিশ্বজুড়ে চলমান গাজা যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে শান্তির দাবিতে বিশ্বজুড়ে মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ।