একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়া ইনক-এর উদ্যোগে গত ২৯ জুন ২০২৫, রবিবার অ্যাশফিল্ড টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয় এক উষ্ণ, প্রাণবন্ত ও হৃদ্যতাপূর্ণ গেট-টুগেদার অনুষ্ঠান। সদ্যসমাপ্ত ২০২৫ সালের বার্ষিক বইমেলার অভাবনীয় সাফল্যের পর এই আয়োজন ছিল আনন্দ ভাগাভাগির আরেকটি মনোমুগ্ধকর উপলক্ষ।
সাম্প্রতিক সফল বইমেলার রেশ কাটতে না কাটতেই একাডেমির সদস্যরা, লেখক-সাংস্কৃতিককর্মীরা এবং বাঙালি কমিউনিটির শুভানুধ্যায়ীরা আবারও একত্র হলেন—এবার কোনও স্টলের চাপ, কোনও আনুষ্ঠানিক মঞ্চ নয়—একটি মেলবন্ধনের সন্ধ্যায়।
সভাপতি সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ সাজুর প্রাণখোলা ও দক্ষ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটির মূল আলোচনা পর্ব শুরু হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে । এ এক আনুষ্ঠানিকতা বর্জিত, আন্তরিক কথাবার্তা যেখানে উঠে আসে অভিজ্ঞতার গল্প, অভাবের কথা, আর ভবিষ্যতের দিশা। বক্তব্য দেন কমিউনিটির পরিচিত মুখ গামা আব্দুল কাদের, ব্যারিষ্টার সিরাজুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান তরুণ, শেখ শামীমুল হক, লেখক সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, ইসহাক হাফিজ, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সফিকুল ইসলাম, অভিজিৎ বড়ুয়া, নাজমুন নাহার, আনিসুর রহমান ও সরকার কবিরুদ্দিন।
তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় একুশে একাডেমির অর্জনের প্রশংসা, পাশাপাশি উঠে আসে নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান। আলোচনায় অনুরণিত হয়—এই সংগঠন শুধু অনুষ্ঠান আয়োজন করে না, এটি প্রবাসে একধরনের সাংস্কৃতিক অবলম্বন হয়ে উঠেছে।
আলোচনার পরে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব—যেখানে একুশে একাডেমির নিজস্ব শিল্পীরা মঞ্চে তুলে ধরেন গান, কবিতা ও নৃত্য পরিবেশনা। কখনও রবীন্দ্রসংগীতের আবেগ, কখনও কবিতায় বাংলার সুর, আবার কখনও ছন্দময় নৃত্যে উঠে আসে বাংলার রূপ ও হৃদয়। পুরো পরিবেশটাই হয়ে ওঠে যেন এক ক্ষণিকের সাংস্কৃতিক উৎসব।
এ আয়োজন শুধু চোখে দেখার বা কানে শোনার ছিল না—ছিল চেখে দেখারও। ঘরোয়া পরিবেশে ছিল সুস্বাদু বাঙালি খাবারের আয়োজন। অতিথিদের জন্য পরিবেশিত হয় থেকে শুরু করে সাদা ভাত, মাটন কারি চিকেন কারি ডিম ভুনা খিচুড়ি, আর হালকা নাস্তার নানা পদ। খাওয়া-দাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে আড্ডা, স্মৃতিচারণ, আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার টুকরো কথা
গান, গল্প আর ঘরোয়া পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা রাত্রির এগিয়ে যায়। অতিথিদের মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি, চোখে ছিল পরের আয়োজনের অপেক্ষা।
একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়া ইনক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে সকল অতিথি, স্বেচ্ছাসেবক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি, যাঁদের অংশগ্রহণে এই আয়োজন প্রাণ পায়।
এই সন্ধ্যা শুধু একটা অনুষ্ঠান ছিল না—এ ছিল প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতির উজ্জ্বল বাতিঘর হয়ে ওঠার এক আরেকটি ছোট ধাপ।