পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত হলো বছরের অন্যতম জমজমাট ও বৃহৎ ঈদ এক্সিবিশন, যেখানে ছিল বাংলাদেশি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর ঈদের কেনাকাটার অনন্য মিলনমেলা।
মিন্টোর ইনডোর স্পোর্টস স্টেডিয়ামে সিডনি বাঙালি বুটিক ক্লাবের উদ্যোগে এবং সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনক এর সহায়তায় আয়োজিত এই এক্সিবিশন হয়ে উঠেছিল একটি প্রাণবন্ত কমিউনিটি উৎসবে। নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে এই আয়োজন ছিল উদ্যোক্তা স্বাবলম্বনের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
দুপুরে এক বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এক্সিবিশনের সূচনা হয় । প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদ্য নির্বাচিত ফেডারেল এমপি ডেভিড মনক্রিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ক্যাম্পবেলটাউন সিটি কাউন্সিলের মেয়র ডার্সি লাউন্ড, ডেপুটি মেয়র কারেন হান্ট। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পবেলটাউন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী, কাউন্সিলর মাসুদ খলিল, কাউন্সিলর আশিকুর রহমান, ক্যামডেন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর এলিজা আজাদ টুম্পা এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ অজয় দত্ত, শফিকুল আলম, কায়সার আহম্মেদ, আব্দুল জলিল, সাদাত হোসেন, পারভেজ খান প্রমুখ এবং বুটিক ক্লাবের সদস্যরা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আয়োজক কমিটির প্রধান সেলিমা বেগম বলেন, “২০১৯ সালে কয়েকজন নারী উদ্যোক্তাকে নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হলেও আজ এই বুটিক ক্লাব সিডনির বাঙালি কমিউনিটির ঈদের অন্যতম আকর্ষণ।”
তিনি আরও জানান, দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য, ঈদের কেনাকাটা এবং নারী উদ্যোক্তাদের স্বনির্ভরতায় উৎসাহ দিতে প্রতিবারই আয়োজনটি বড় পরিসরে করা হয়।
প্রধান অতিথি ডেভিড মনক্রিফ বলেন, “বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ানদের সংস্কৃতি ও উৎসবকে আমি গভীর শ্রদ্ধা করি। নারী উদ্যোক্তাদের এই সফল উদ্যোগ আমাদের সমাজের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা। আমি আগামীতেও তাদের পাশে থাকব।”
মেয়র ডার্সি লাউন্ড বলেন, “এটি শুধু একটি উৎসব নয়, বরং আমাদের মাল্টিকালচারাল সমাজের প্রতিচ্ছবি। এই আয়োজনে অর্থনীতি যেমন লাভবান হচ্ছে, তেমনি সাংস্কৃতিক সংহতিও শক্তিশালী হচ্ছে।”
এক্সিবিশনে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণে ছিল ক্রেতাদের ভীড় । শুধু সিডনিই নয়, ক্যানবেরা ও অন্যান্য শহর থেকেও দর্শনার্থীরা এসেছিলেন ঈদের কেনাকাটার আমেজে অংশ নিতে। রঙ-বেরঙের পোশাক, গয়না, হেনা, হ্যান্ডক্রাফটস, খাবার আর মিউজিক—সব মিলিয়ে একসাথে ঈদের এক আগাম আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
উক্ত আয়োজনের ফটোগ্রাফিতে ছিলেন ঐহিক তারিক, হলের সাজসজ্জায় ছিল কানিতা হিউমিনিটি ফার্স্ট, আর খাবারের পরিবেশনে অংশ নেয় জমিদারবাড়ী রেস্টুরেন্ট—যা দর্শনার্থীদের প্রশংসা কুড়ায়।
এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারী এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, “আমরা শুধু পণ্য বিক্রি করতে আসিনি, বরং সংস্কৃতি, ভালোবাসা আর পারস্পরিক সম্মান বিনিময় করতেই এসেছি। এই প্ল্যাটফর্ম আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।”
সিডনির এই ঈদ এক্সিবিশন যেন আরেকবার প্রমাণ করল, প্রবাসে থেকেও সংস্কৃতিকে ধারণ করা সম্ভব সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। নারী উদ্যোক্তা, কমিউনিটি সংগঠন এবং সরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গড়া এই উদ্যোগ আরও বহু বছর ধরে প্রবাসী বাঙালিদের ঈদের প্রস্তুতির কেন্দ্রে থাকবে—এমনটাই প্রত্যাশা এক্সিবিশনে আগত কমিউনিটির সকলের।
Leave a Reply