অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) অস্ট্রেলিয়া ওভারসিজ চ্যাপ্টার গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশের জন্য ওয়াশিংটন অ্যাকর্ড স্বাক্ষরকারীর মর্যাদা উদযাপন করেছে। হলিডেইন, ওয়ারউইক ফার্ম, ৩৫৫ হিউম হাইওয়ে NSW 2170 এই অনুস্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে ১৫০ জনের বেশি বাংলাদেশি প্রকৌশলী এবং পরিবার উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় এবং বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে সকল মৃত্যুর সম্মানে শোক ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এসময় অবিলম্বে নিরপেক্ষ বিচারের দাবি করা হয়। উদযাপনের থিম হিসাবে ২৫টি স্বাক্ষরকারী দেশের পতাকা ১৩ জন মহিলা প্রকৌশলী সহ সর্বমোট ২৫ জন প্রকৌশলী দ্বারা প্রতিফলিত হই।
এরপর মঞ্চে বিশিষ্ট অতিথিদের সংবর্ধনা দেন আইইবি অস্ট্রেলিয়া চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মতিন ও সেক্রেটারি ড. প্রকৌশলী এএইচএম কামরুজ্জামান। এরপর সম্মানিত প্রধান অতিথি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এলিজাবেথ টেলর এও, চেয়ারম্যান, ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং আ্যালায়েন্স (IEA) এবং ওয়াশিংটন আ্যাকর্ডের অতীত চেয়ার; ড. হেলেন ফেয়ারওয়েদার, হেড অফ ত্যাক্রিডিটেশন, ইঞ্জিনিয়ার্স অস্ট্রেলিয়া (EA), সাখাওয়াত হোসেন, সিডনিতে অবস্থিত বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল; ড. রিচার্ড কেলি, জেনারেল ম্যানেজার টেকনিক্যাল এক্ট্রিলেন্স, SMEC এবং আরও কয়েকজন বিশিষ্ট অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রকৌশলী মোঃ শফিক শুভ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। সাথে আরও ছিলেন প্রকৌশলী সাদিয়া আফরিন।
পরিচয় পর্বের পর, ড. এএইচএম কামরুজ্জামান “ওয়াশিংটন একর্ড স্বাক্ষরকারী মর্যাদা অর্জনের জন্য ২০১৬ সাল থেকে আইইবি অস্ট্রেলিয়া অধ্যায় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে কীভাবে কাজ করেছে” সে বিষয়ের উপর উপস্থাপনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, আমরা বোর্ড অফ আ্যাক্রেডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং আযান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশন (BAETE) এর
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক এএফএম সাইফুল আমিন, BAETE চেয়ারম্যান, IEB সিনিয়র এক্সিকিউটিভস, ইঞ্জিনিয়ার্স অস্ট্রেলিয়া (EA), ভাইস চ্যান্সেলর; এবং IEB অস্ট্রেলিয়া চ্যাপটারের কার্যানর্বাহী কমিটির সদস্যদের সাথে কাজ করেছি।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন আ্যাকর্ডের কৃতিত্ব আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য, বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের জন্য এবং এটি একটি দেশের এ্ঁতিহাসিক মাইলফলক অর্জন। পরে তিনি প্রকৌশলীদের কাছে ওয়াশিংটন আ্যাকর্ডের বিভিন্ন সুবিধা ব্যাখ্যা করেন। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক গবেষণা, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্নাতকোন্তর অধ্যয়ন, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ এবং বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের অংশগ্রহন, প্রতিযোগিতামূলক বেতন সহ বৈদেশিক কর্মসংস্থান, সরকারি ও বেসরকারি খাতে মর্াদাপূর্ণ কর্মসংস্থান এবং অভিবাসন। মাননীয় প্রধান অতিধি অধ্যাপক এলিজাবেথ টেলর উপস্থাপনার বিষয়বস্তু এবং BAETE-এর বিভিন্ন কার্যক্রম, (বিশেষ করে বাংলাদেশে মেগা প্রকল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারী প্রকৌশল, স্থায়িত্ব এবং ফলাফল-ভিত্তিক শিক্ষা (OBE) ব্যবস্থায় বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের অবদানের জন্য প্রশংসা করেন। এরপর তিনি IEB এবং BAETE কে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ ওয়াশিংটন আ্যাকর্ড ক্ষরকারী মর্যাদা অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানান।
প্রফেসর এলিজাবেথ আরো ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে বাংলাদেশ ২৩টি স্বাক্ষরকারী দেশের সমর্থনে পূর্ণ স্বাক্ষরকারীর মর্যাদা পেয়েছে গত ১২ই জুন ২০২৪ এ নয়াদিলিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে। তিনি অতীতে দুই বার বাংলাদেশ সফর করার তার ইতিবাচক অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং সাম্প্রতিক একটি সেতু নির্মানে পথচারীদের হাঁটার ব্যবস্থা রাখার জন্য প্রশংসা করেন।
এরপর প্রফেসর এএফএম সাইফুল আমিন তার ভিডিও উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি কিভাবে IEB অস্ট্রেলিয়া চ্যাপ্টার, EA এবং IEB এক সাথে বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ারদের বৃহত্তর লক্ষ্যে কাজ করতে পারে সে ব্যাখ্যা দেন। প্রফেসর সাইফুল আমিন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ইমেরিটাস প্রফেসর এলিজাবেথ টেলর সহ সকল বিশিষ্ট অতিথিদের উপস্থিতি স্বীকার করেন। এরপর তিনি BAETE এর ইতিহাস এবং কিভাবে IEB গত ২১ বছর ধরে কাজ করার পর ওয়াশিংটন ত্যাকর্ডের স্বীকৃতি পেয়েছে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন।
তার ব্যাখ্যায়, তিনি প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক এবংBAETE-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যিনি ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ওয়াশিংটন একর্ডের অস্থায়ী বীকৃতি লাভের জন্য কাজ করেছেন। প্রফেসর সাইফুল আমিন তারপর ওয়াশিংটন
আ্যাকর্ডের প্রয়োজনে বাংলাদেশে OBE পাঠ্যক্রম ব্যবস্থার বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের BAETE স্বীকৃতি ব্যবস্থার উন্নয়ন, কোভিড এবং অন্যান্য বাধার কারনে সম্পূর্ণ ওয়াশিংটন আ্যাকর্ড আ্যাক্রিডিটেশন স্বাক্ষরকারী অর্জন করতে BAETE-এর জন্য এতদীর্ঘ সময় লেগেছিল। তিনি অবশেষে উল্লেখ করেন যে আমাদের সম্পূর্ণ স্বাক্ষরকারী মর্যাদার ফলে, IEB
অস্ট্রেলিয়া অধ্যায় এখন বিভিন্ন পারস্পরিক সুবিধার জন্য EA এবং IEB/ BAETE এর সাথে একসাথে কাজ করতে পারে। অধ্যাপক সাফুল আমিনের অত্যন্ত সুচিন্তিত ভিডিও বকৃতৃতায় শ্রোতারা খুবই খুশি হয়েছেন।
অন্যান্য বিশিষ্ট অতিধি যেমন, ড. হেলেন, ড. রিচার্ড কেলি এবং জনাব সাখাওয়াত হোসেন সকলেই ওয়াশিংটন আ্যাকর্ড অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান এবং এই উদযাপনের আয়োজন করার জন্য আইইবি অস্ট্রেলিয়া অধ্যায়ের প্রশংসা করেন। ড. হেলেন অস্ট্রেলিয়ার মেধাবী বাংলাদেশী প্রকৌশলীদেরকে বিভিন্ন আ্যাক্রিডিটেশন প্রোগ্রামের (যেমন CPEng) জন্য EA এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করেন।
ড. রিচার্ড কেলি পদ্মা সেতু, টানেলিং এবং ডিস্যালিনেশন প্রকর সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন Mega অবকাঠামো প্রকল্পে SMEC বাংলাদেশ কীভাবে কাজ করেছে তার একটি বিস্তৃত ভিডিও উপস্থাপনা দেখান। অবশেষে, ইঞ্জি আবদুল মতিন প্রফেসর এলিজাবেথ টেলরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আইইবির সকল বিশেষ অতিথি, সহকর্মী প্রকৌশলী, পৃষ্ঠপোষক ও পরিবারবর্গসহ সবাইকে এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার জন্য প্রশংসা করেন। তিনি EA, BAETE এবং অন্যান্য প্রধান স্টেকহোন্ডারদের সাথে IEB অস্ট্রেলিয়া চ্যাপ্টারের কার্যক্রম আরও জোরদার করার জন্য তার মতামত ব্যক্ত করেন।
উপস্থাপনা ও বক্তৃতা শেষে, আইইবি নির্বাহী সদস্য এবং বিশিষ্ট প্রকৌশলী/শিক্ষাবিদ গণ যথা: অধ্যাপক ড.আতাউর রহমান, ইঞ্জি, আবু সাঈদ আসাদ, ইঞ্জি সোহেল করিম, ড. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড নেওয়াজ শেখ, ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, ইঞ্জি. মোসারাত হোসেন খান, ইঞ্জি. রশিদ চৌধুরী ও আতিকুর রহমান চপল বিশিষ্ট অতিধিদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে ইঞ্জি- ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন তার সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন এবং অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।
Leave a Reply