মিউজিক থেরাপি হল একটি গবেষণা-ভিত্তিক সহযোগী স্বাস্থ্য পেশা যেখানে সঙ্গীতকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করা হয় ।এটি সব বয়সের মানুষকে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিচালনা করতে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
এমন কেউ আছেন যার সঙ্গীত বা সুরের প্রয়োজন নেই? না, নেই। এ রকম মানুষ এই যান্ত্রিক জগতে মিলবে না। শুধু সঙ্গীত শোনায় আছে ভিন্নতা। কারও পছন্দ নজরুল কারও আবার রবীন্দ্রসঙ্গীত বা কেউ সকালে শোনেন নজরুল আবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া শূন্যতা ভোগ করেন। আমাদের এই অঞ্চলে দেহতত্ত্ব গানেরও বেশ জনপ্রিয়তা আছে, সব বয়সী মানুষ পছন্দ করেন লালন সাই, বাউল আবদুল করিম কিংবা হাসন রাজার গান। তরুণরা সচরাচর ব্যান্ডসঙ্গীত শুনতে পছন্দ করে। ইদানীং রক বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণে ফিউশন গানও অনেকে শুনছেন। আবার অনেকে শুনতে ভালবাসেন ইউরোপিয়ান সঙ্গীত।
সংগীত এবং সুরের জাদু অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের মানসিক অবস্থার স্থিতির উপরে।
যেমন দুঃখ, কষ্টের সময় আমরা একটু সফট মিউজিক শুনতে পছন্দ করি। আবার আনন্দ কিনবা উল্লাসের সময় আমরা লাউড মিউজিক শুনি। প্রকৃত অর্থে সঠিক সময়ে সঠিক মিউজিক আমাদের শারীরিক ও মানসিক শান্তি দেয়। তাই বর্তমানে মিউজিক থেরাপির প্রচলন বেড়েছে। এখন অনেক হসপিটালেও রোগীদের মানসিকভাবে সুস্থ করতে মিউজিক থেরাপি দেওয়া হছে। মিউজিক থেরাপি কিভাবে কাজ করে ?
১) যারা মারাত্মক মানসিক চাপ নিতে পারেন না তারা যদি সঠিক মিউজিকে নিজেদের সংযুক্ত করতে পারেন তবে তাতে মনের ভিতর তৈরি হয় সাময়িক ভাললাগা। এটি এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে ও পেশীকে শিথিল করে রক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রণে আনে।
২) বিশেষজ্ঞদের মতে অ্যান্টিডিপ্রেশন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি মিউজিক থেরাপি করানো যায় তবে ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষের জন্য আশাতীত ফল পাওয়া যায়।
৩)বিজ্ঞানীদের মতে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের পূর্বে সঠিক মিউজিক শুনলে ওই কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি গবেষকদের দাবি গান শোনার পর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পড়ার আগ্রহের সঙ্গে মনোযোগ ও দক্ষতাও বাড়ে।
৪) বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে ডিমেনশিয়ার ক্ষেত্রে রোগীর হার্ট বা সেরিব্রাল স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মিউজিক থেরাপি হৃদরোগ বা সেরিব্রাল অ্যাটাক নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫) চিকিৎসকদের মতে গর্ভাবস্থায় মিউজিক থেরাপি নেওয়া উচিৎ। এতে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সুন্দর হয়। এছাড়াও এতে শিশুর মনের উপর ভালো প্রভাব পড়ে।
মিউজিক থেরাপিতে অংশ নিতে বা উপকৃত হওয়ার জন্য আপনাকে মিউজিক্যাল হতে হবে না। দক্ষ সঙ্গীত থেরাপিস্ট আপনাকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারেন।এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই থেরাপি জনপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়েও দাঁড়িয়েছে।
Leave a Reply