গত ১ জুন (শনিবার) সিডনির ক্যাসুলা পাওয়ার হাউজ আর্টস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় ভবের হাট সিজন-৮ এর ময়ূরপঙ্খী নায়। অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছিল বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের বাউল সংগীত সহ জারি সারি , ভাওয়াইয়া ও পল্লীগীতির নানা আয়োজনে।
শনিবার সিডনি আকাশ ভেঙে নেমেছিল অঝোর ধারায় বৃষ্টি।আর ভবের হাটের এইবারের থিম ময়ূরপঙ্খী নায় যেন একের সাথে অন্যের যোগাযোগ। হল ভর্তি উপস্থিত সকল দর্শক শ্রোতা যেনো ময়ূরপঙ্খী নায়ে চরে সুরের ধরায় ভেসে গেছেন গ্রাম বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বাউল গানের আসরে।
ভবের হাটের কর্নধার ফারিয়া আহমেদের পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও পরিচালনায় এবং শাকিল চৌধুরীর প্রাণবন্ত সঞ্চালনায়
ভবের হাট সিজন-৮ প্রতি বছরের মত আবহমান বাংলার মাটি ও মানুষের বাউল গান এবারো পরিণত হয় বাংলাদেশের একখন্ড বাউল গানের আসরে।
সিডনির বিশিষ্ট তবলা বাদক বিজয় সাহার উচ্চাঙ্গ বাদ্যের মূর্ছনায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। তিনি তবলার বাজানোর পাশাপাশি ঢোল, খোল, নাল, জিম্বে, কঙ্গো, বঙ্গো, শেকার, পিয়ানো, কীবোর্ড, হারমোনিয়াম এবং পার্কাশন সহ আরও অনেক যন্ত্র বাজিয়ে দর্শকদের অভিভূত করেন। তাকে সংগত করেন অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রীরা।
অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় পর্ব ছিলো গুণীজন সংবর্ধনা।এবছর মিউজিশিয়ান ক্যাটাগরীতে তবলাতে বিজয় সাহা, মন্দিরাতে লোকমান হাকিম, নাট্য এবং অভিনয়ে সিডনীর নাট্য ব্যক্তিত্ব শাহীন শাহনেয়াজ, কমিউনিটি ওয়ার্কে আবদুস সোবহান এবং বাংলা ভাষা ও কৃষ্টি নিয়ে কাজের জন্য সিডনীর প্রিয়মুখ নাজমুল খানকে “মেন্টর অফ বাংগালী কালচার” ভবের হাট আজীবন সন্মাননা পুরষ্কারে সন্মানিত করা হয়। এছাড়াও ওয়ান ষ্টপ বিল্ডার্স এর সিইও এবং কর্ণধার সেলিম চৈীধুরীকে স্পন্সর ক্যাটাগরীতে সন্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কনসল জেনারেল সিডনী শাখওয়াত হোসেন, এবং প্রতিতী‘র প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সিরাজুস সালেকিন।এই গুণীজনদের ফুল, উত্তরীয় ও ক্রেষ্ট প্রদানের মাধ্যমে সন্মাননা প্রদান করেন।
যন্ত্র সংগীত, লোকনৃত্য ও বাউল গানের মূর্ছনায় হলভরা দর্শকরা প্রাণভরে উপভোগ করেন বাউল গানের এই আসরের প্রতিটি মুহুর্ত।
অর্পিতা সোম চৌধুরীর পরিচালনায় সিডনীতে ভবের হাট শিল্পীদের লাইভ গান ”ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও মাঝি” এর সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন অর্পিতা সোম চৌধুরী এবং ভবের হাট শিল্পীদের লাইভ গান “বিহুরে লগন মধুরে এ লগন” এর সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন হেনা খাতুন, শীতল শাখওয়াত এবং জেবিন মেহরুবা।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন, বনফুল বড়ুয়া, লামিয়া আহমেদ, নিলাদ্রী চক্রবর্তী ও ভবের হাটের কর্ণধার ফারিয়া আহমেদ। নতুন প্রজন্মের শিল্পী নিলাদ্রী চক্রবর্তীর প্রতিটি গানে অভিভুত দর্শকরা মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে তাকে অভিবাদন জানায়।
উক্ত অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিলো বনফুল ও শাকিলের বাংলাদেশের হালের জনপ্রিয় চট্টগ্রাম বিষয়ক “মুড়ির টিন গান”চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় গাওয়া এই গান শ্রোতারা উপভোগ করেন। দর্শকদের অনুরোধে লুনিয়ার গাওয়া গান ”মারিয়া ভুজঙ্গ তীর” এবং ফারিয়া গাওয়া ক্লাসিক্যাল ফোক ছিল দর্শকদের জন্য ছিল বিশেষ বাড়তি পাওয়া।
যন্ত্র সংগীতে ছিলেন তবলায় বিজয় সাহা, গিটারে সোহেল খান, অক্টোপ্যাডে আলী কাওসার, দোতারায় ফয়সাল সজীব, কী-বোর্ডে নিলাদ্রী চক্রবর্তী, গিটারে বনফুল, মন্দিরাতে লোকমান হাকিম এবং বিশিষ্ট সারোদ শিল্পী তানিম হায়াত খান রাজিত। শব্দ নিয়ন্ত্রনে ছিলেন সন, রহমান ও মাহাদী।
ফটোগ্রাফীতে সরকার কবিরুদ্দিন, আবু তারিক মলয় বিশ্বাস ও হোসেন প্রোডাকসন। মঞ্চসজ্জা ও প্রজেক্টর পরিচালনায় জাকী খন্দকার ও সুমন কবীর। সহযোগিতায় লিংকন, রানা ও সুমন।
অনুষ্ঠানে শিল্পীদের রাতের খাবার সরবরাহ করেন নওয়াব রেষ্টুরেন্টের পরিচালক মো. লুৎফর রহমান টিপু ও শফিক শেখ। সাধারণ দর্শকদের জন্য খাবার পরিবেশনায় ছিলো টুকি টাকি মিন্টো। স্পন্সর প্রদান করেন ওয়ান ষ্টপ বিল্ডারসের সিইও সেলিম চেীধুরী।
সবশেষে, সকল সুধী দর্শক, আগত অতিথি, সন্মানিত স্পন্সর, মিডিয়া প্রতিনিধি, সকল শিল্পী ও কলাকুশলীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে এবং আগামী বছর ভবের হাট সিজন-৯ এর সম্ভাব্য তারিখ (১ম সপ্তাহ মার্চ ২০২৫) ঘোষণা এবং বাংলার মাটি ও মানুষের গানের পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন ভবের হাটের কর্নধার ফারিয়া আহমেদ।
Leave a Reply