প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মা শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতি ৬ হাজার নাগরিকের জন্য সারা দেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া আমরা জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচি গ্রহণ করেছি, যার মূল লক্ষ্য শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের বিদ্যমান অপুষ্টি কমিয়ে আনা।
তিনি বলেন, নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নেও আমরা বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করি। নারী ও পুরুষের মধ্যে অসমতা দূরীকরণ, নারী শিক্ষার বিস্তার ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও আমাদের আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার (১৫ মে) রাজধানীর হোটেলে ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘আইসিপিডি-৩০: জনসংখ্যাগত বৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়নবিষয়ক বৈশ্বিক সংলাপ’ শীর্ষক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এ সংলাপ আয়োজন করেছে। ৪৮টি দেশের প্রতিনিধি এ সংলাপে অংশগ্রহণ করছেন।
স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ইউএনএফপিএ ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই বৈশ্বিক সংলাপ আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে নির্বাচন করায় আমি ইউএনএফপিএ-এর নির্বাহী পরিচালককে সাধুবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনসংখ্যাগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন অর্জনে আপনাদের আগ্রহ ও প্রত্যয় আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের পর জনস্বাস্থ্যের উন্নতি বিধানে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পরেই ১৯৭২ সালে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। তাঁর দিক-নির্দেশনায় প্রণীত ১৯৭৩-১৯৭৮ মেয়াদের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জনসংখ্যার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ন্যাশনাল পপুলেশন কাউন্সিল’ গঠন করেন যার সভাপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজেই।
জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার সাফল্য বঙ্গবন্ধুর দেখে যেতে পারেননি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতাদখলকারী অগণতান্ত্রিক সরকারগুলোর অপরিণামদর্শী নীতির কারণে জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনায় আশানুরূপ সাফল্য দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে। দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রণয়ন করি নতুন ‘জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি’।
কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আমাদের অনেক জনল্যাণমুখী কর্মসূচি বাতিল করা হয়। ফলে জনসংখ্যা উন্নয়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় স্থবিরতা নেমে আসে।
২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সে কার্যক্রম ফের চালু করে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সালে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ফের সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর আমরা ICPD Program of Action-এর ১৫টি মূলনীতি বাস্তবায়নে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০১২ প্রণয়ন করি। মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুহার হ্রাস, মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা, শিশু ও কিশোর-কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প পুনরায় চালু করি।
বর্তমানে সারা দেশে সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এগুলোর মাধ্যমে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবাসহ ৩০টি অতি প্রয়োজনীয় ঔষধ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার ক্লিনিকে Skilled Birth Attendence সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন ৩ হাজার ২শ ৯০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র/পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক হতে মা, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে, ২ হাজার ২শটি কেন্দ্র থেকে সার্বক্ষণিক স্বাভাবিক প্রসব সেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রসূতিসেবা প্রদানের জন্য এসব কেন্দ্রে ৪ জন করে ধাত্রী নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমি ৩০ হাজার ধাত্রী নিয়োগের অঙ্গীকার করেছিলাম। এর ধারাবাহিকতায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ২০ হাজার ধাত্রী নিয়োগ করা সম্ভব হবে বলে আমি আশা করি।
Leave a Reply