চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে পরিবহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। রোববার (২৮ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে এই ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হবে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সংগঠনের কার্যালয়ে জরুরি সভা শেষে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহবায়ক মনজুরুল আলম চৌধুরী।
সভা শেষে মনজুরুল আলম চৌধুরী বলেন, ’পরিবহনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের উপর যে স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে তার পরিত্রাণ চাই। ইতিমধ্যে আমাদের শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ১২ ঘণ্টা কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। রাস্তার উপর বর্তমানে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, যেমন- সড়ক দুর্ঘটনায় প্রভাবশালী মহলের অতিরিক্ত প্রভাব বা চাপ, বিনা অভিযোগে যত্রতত্রভাবে আমাদের শ্রমিক কর্মচারীদের গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কে সকল অনুমোদন বিহীন যানবাহণ চলাচল বন্ধ করতে হবে।’
’চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কে চুয়েটের যে দুইজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন, তার জন্য আমরা সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। ঘটনার পর অতিরিক্তভাবে আমরা মালিক এবং শ্রমিকরা আমরা নিজেদের তহবিল থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করেছি। আমাদের দুইটা গাড়ি জিম্মি রেখে এবং বাকি একটাসহ মোট তিনটা গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমরা ওইসব গাড়ির ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। যারা ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে বিচার আওতায় আনার জন্য আমরা জোর দাবি জানাই।’
কর্মসূচি ঘোষণা দিতে গিয়ে এই পরিবহন মালিক নেতা বলেন, ‘এইসব বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে আমাদের শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে যে ১২ ঘন্টা কর্ম বিরতি ঘোষণা করা হয়েছে, আমাদের পরিবহন, মালিক ও শ্রমিকের নিরাপত্তার স্বার্থে আগামীকাল (রোববার) ভোর ছয়টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা বৃহত্তর চট্টগ্রামে ধর্মঘট আহবান করেছি। আমাদের এইসব দাবি মানা না হলে আগামী ২ ও ৩ মে সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা দেব।’
‘আমরা সরকারকে বিব্রত করতে চাই না। যে সমস্ত উশৃংখল ছাত্ররা বা ছাত্র নামের কিছু ব্যক্তি আমাদের পরিবহনের উপর আগুন দিয়েছে তাদের বিচার দাবি করছি। আইন সকলের জন্য সমান। এ আইন যথার্থ প্রয়োগ হোক আমরা সেটাই চাই। আমরা চাই না সারাদেশকে অকার্যকর করে সরকার বিব্রত হোক।’ বলে যোগ করেন মনজুরুল আলম চৌধুরী।
পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা জানান, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলায় বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা ও অটোটেম্পু চলাচল বন্ধ থাকবে। দূরপাল্লার কোনো বাস এসব জেলা ও মহানগর থেকে ছাড়বে না এবং ঢুকতেও পারবে না। মালিক-শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হয়। এর জের ধরে ওইদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাকে ২৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা গণ পরিবহনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
Leave a Reply