চলে গেলেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশ।তিনি অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৮বছর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলে(বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল)১১৬নং কক্ষে লাল সবুজের মূল পতাকার ডিজাইন করেন শিব নারায়ণ দাশ। সেই পতাকায় লাল অংশের মাঝখানে একটি মানচিত্র ছিল।
পরবর্তীতে কামরুল হাসান মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলায় তাকেই ডিজাইনার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালে প্রথম বারের মতো প্রকাশ্যে আসা শিব নারায়ণ দাশ এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ১৯৭০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি যে পতাকাটি তৈরি করা হয়েছিল তাতে সবুজ রং দিয়ে নির্দেশ করা হয়েছিল এই সবুজ বাংলার চিত্র এবং আর লাল রংটি দেওয়া হয়েছিল সংগ্রাম এবং জীবনের প্রতীক হিসেবে।
আর মাঝে মানচিত্রটি সোনালী রং দিয়ে আঁকা হয়েছিল এই সোনালী বাংলার প্রতীক হিসেবে।
পতাকার মাঝে মানচিত্র আঁকার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন,পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম বাংলা আলাদা করে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বোঝাতে মানচিত্রটি দেওয়া হয় এবং স্বাধীনতার পরে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক ছাতৃ সমাবেশে তাঁর নকশা করা স্বাধীনতার প্রতীক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন জাসদ নেতা আ স ম আব্দুর রব।
তিনি একজন ছাত্রনেতা ও স্বভাব আঁকিয়ে।শিবনারায়ণ দাশ প্রথম ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। তাঁর বাবা সতীশচন্দ্র দাশ কুমিল্লাতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিবনারায়ন দাশের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ন দাশের নকশা করা পতাকার মধ্যে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ, ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
ব্যক্তিগত জীবনে শিবনারায়ন দাশ এক সন্তানের জনক। তার নাম অর্ণব আদিত্য দাস। তাঁর স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী।তিনি পরিবারসহ ঢাকার মনিপুরে বসবাস করতেন।অনন্তলোকে এই বীর আত্মা শান্তিতে থাকুক।
Leave a Reply