চৈত্র সংক্রান্তি / বর্ষ বিদায় একেক অঞ্চলে একেক রকম নিয়ম!
আবার একই এলাকার ভিন্ন ভিন্ন পরিবারে ভিন্ন ভিন্ন নিময়ও দেখা যায়!
আমাদের রাজশাহীতে এই দিনে সকালে স্নান সেরে মা- ঠাকুমারা দেবতার নৈবেদ্যে যবের ছাতু, কাঁচা আম, আঁখের গুড়, ভেজা ছোলা ফল মূল মিষ্টি দিতেন। কিন্তু ছাতু অবশ্যই থাকতে হবে।
এ কারণে এই সংক্রান্তিকে ছাতু সংক্রান্তিও বলে….
এই নিয়ম গুলো কোন শাস্ত্রে লেখা আছে বলে আমার মনে হয় না। এগুলো আঞ্চলিক সংস্কৃতি!
সব কিছুর সাথে যৌক্তিক কারণও থাকে কিছু…..
যুগ যুগ ধরে মানুষ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে।
তারা বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের সন্ধান করতে করতেই চাষাবাদ শিখেছে, শিখেছে কোন ঋতুতে কোন ফসল ফলালে ভালো ফলন পাওয়া যায়!
এই চৈত্রে রবি শস্য অর্থাৎ গম যব, ছোলা- মটর ইত্যাদি এই শস্যগুলো ফলে….
তাই হয়ত এই বছরের উৎপাদিত নতুন ফসলে তৈরি খাদ্য সামগ্রী দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে তারপর নিজেরা গ্রহণের মানসেই এই প্রথার সৃষ্টি হয়েছে….
আবার বছরের এই শেষ দিনে নানা রকম তিতা শাক সব্জি, লতা-পাতা খাবার চল আছে আমাদের এলাকায়।
নতুন আাম দিয়ে টক ডাল, কাঁচা কাঁঠালের তরকারি, নানা রকম ভাজাভুজি, আমের চাটনি, পায়েস ইত্যাদি।
একদম পুরো নিরামিষ দিন আজকের দিনটি!!
অনেকে মনে করেন, তিতা খেয়ে বিগত দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঝগড়া -বিবাদ – তিক্ততা ঘুচে গিয়ে আাগামী বছরে যেন সব মঙ্গল হয় সেই মানসে এই আয়োজন!!
এই ভাবনার পাশাপাশি এই কারণটাও যুক্ত সেটা এই সময় গরমে মানুষের নানা রকম চর্মরোগ যেমন বসন্ত, চুলকানি, খোসপাঁচড়া ইত্যাদি হয় তাই তিতা যুক্ত খাবার খাওয়া খুবই উপকারী ও উপযোগী।
নিম পাতা, পাটশাক, গিমাশাক, করলা ইত্যাদি আজকের দুপুরের পদে থাকে আামাদের!
চিটাগাং এ তো আরো অনেক সমৃদ্ধ সংস্কৃতি!!
এই সময়ের সব রকম শাক সব্জি, ঔষধি গুণ সম্পন্ন লতা পাতা কাণ্ড মূল সব দিয়ে পাঁচন রান্না করা হয় এবং পরিবার – পরিজনদের নিয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে খাওয়া ও বিতরণ করা হয়৷৷
যে যেই কারণেই এই নিয়ম নীতি বা প্রথা পালন করে থাকুক তাদের মনস্কামনা পূর্ণ হোক….
অশুভ ও তিক্ততার সময় পেরিয়ে সৌহার্দ্যের পথে চলতে চলতে শুভ ও মঙ্গলের দেখা হোক, জীবন হোক জয়ের- আনন্দের, বন্ধন হোক সম্প্রীতিপূর্ণ…..
(যারা কোন দিনই নিমপাতা তিতার ভয়ে বা এটা আবার কেউ খায় নাকি ভেবে খাবেন না কস্মিনকালেও ভেবে বসে আছেন তাদের জন্য দিলাম প্রণালী, একদিন করে দেখবেন….
মন্দ লাগলেও উপকার পাবেন….
নিমপাতা ছাড়িয়ে জলে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে ভালো কর ধুয়ে নিবেন।
ডুনো করে বেগুন কেটে নুন হলুদ মেখে নিবেন।
এবার কড়াইয়ে সামান্য তেল দিয়ে বেগুন ভেজে তুলে নিবেন। এবার ঐ তেলেনিম পাতা দিয়ে অল্প আঁচে এক চিমটি নুব দিয়ে নেড়ে নেড়ে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিবেন।
খাবার সময় গুঁড়ো করে একটু ঘি ও বেগুন দিয়ে গরম ভাতের সাথে প্রথম পাতে খেয়ে দেখবেন, জমের দূয়ারে কাঁটা ফেলবেন….)
Leave a Reply