আজ ক্যালেন্ডারের হিসেবে বাংলা বছরের শেষ মাস চৈত্রের শেষ দিন। রাত পোহালে নতুন বছরের সূর্যোদয় হবে কাল।বৈশাখের প্রথম দিন।সহস্র বছরের পুরোনো হিসেবে সৌরমতে বৈশাখ আগে বছরের প্রথম মাস ছিলো না।মোঘল সম্রাট আকবর ফসল কাটা এবং খাজনা আদায়ের সুবিধার্তে নতুন সন প্রবর্তনের অনুরোধ করেন বিজ্ঞ সভাসদদের।পন্ডিত আমির ফতেউল্লা্হ সিরাজী সম্রাটের সিংহাসন আরোহন এবং সৌরমাস মিলিয়ে বৈশাখকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে গণনা শুরু করেন।সেই থেকে বাংলায় পহেলা বৈশাখ নববর্ষের মর্যাদা পেয়েছে।
নববর্ষের আগের দিন অর্থ্যাৎ চৈত্রের শেষ দিনকে গ্রাম বাংলার মানুষ পালন করে নানা লোকাচারে।গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহের পর নতুন সনে জীবনে যেন স্বস্তি আসে তাই যত আয়োজন।চৈত্র সংক্রান্তির বিশেষ আয়োজনের মধ্যে একটা হলো পাঁচন রান্না।অনেক এলাকায়ই এই পাঁচন রান্না হয়।
টক,ঝাল,মিষ্টি,তিতা,নোনতা এই পাঁচ স্বাদের শাক সব্জি যা কিনা গ্রাম বাংলার পথে-ঘাটে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় তাই দিয়ে রান্না হয় এই পাঁচন।মনে করা হয় এই পাঁচন বছরের শেষে এক প্রকার ঔষধি হিসেবে কাজ করে।ঋতু বদলের সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বা প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত লতা-পাতা-বীজ-শস্য-ডাল একত্রিত করে খেলে শরীরের পাশাপাশি নতুন বছর ভালো ও দুর্ভোগবিহীন কাটাতে সাহায্য করবে-এমন ধারণা বা বিশ্বাস থেকেই পাঁচন রান্নার প্রচলন।
পাঁচন রান্নার পাশাপাশি বাংলা নতুন সনে মেলা বসে যা গ্রাম বাংলার আরো একটি পুরোনো ঐতিহ্য। মেলায় বাঁশ, বেত, প্লাস্টিক, মাটি ও ধাতুর তৈরী বিভিন্ন ধরণের তৈজসপত্র ও খেলনা, বিভিন্ন রকমের ফল-ফলাদি ও মিষ্টি কেনা-বেচা হয়। বায়োস্কোপ, সার্কাস, পুতুলনাচ, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদি চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাও থাকে।
কালের বিবর্তনে ও নানা পারিপার্শিক পরিস্থিতির কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের একান্ত নিজস্ব সংস্কৃতির আধারগুলো তবুও
ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ এবং আদিবাসীরা নানা আয়োজনে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় আর নিজস্ব ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে আগলে রাখার এই ধারাবাহিকতা এগিয়ে চলুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
Leave a Reply