গত ৩০ মার্চ শনিবার সিডনির হার্সভীল সিভিক থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো দ্রৌপদী ফেনোমেনন – অসাধারন একটি নৃত্য নাট্য।সাংস্কৃতিক সংগঠন নটরাজ ডান্স একাডেমীর কর্নধার শ্রেয়সী দাস ও তার দল এবং ইন্ডিয়া থেকে আগত শ্রেয়েসী দাসের নৃত্যগুরু আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত ও স্বনামধন্যা নৃত্যশিল্পী সঞ্চিতা ভট্টাচার্যের এটি সিডনিতে প্রথম প্রযোজনা।
‘দ্য দ্রৌপদী ফেনোমেনন’ পৌরাণিক কাহিনী দ্রৌপদীর বলিষ্ঠ চরিত্রের উপর নির্ভর করে এই নৃত্যনাট্যটি করা হয়েছে, এবং গুরু সঞ্চিতা ভট্টচার্য্য তার অসাধারন নৃত্যশৈলীতে দ্রৌপদীর সাহসিকতা, আত্মমর্যাদাবোধ ও সুকঠিন ব্যক্তিত্বের পুরোটাই তুলে ধরেছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কোলকাতা থেকে আগত নৃত্যগুরু সঞ্চিতা ভট্টচার্য্যকে সম্মাননা জানানো হয়।এরপর “বন্দে মাতরম” এর সাথে যুগল নৃত্য পরিবেশন করেন গুরু সঞ্চিতা ভট্টচার্য ও শিষ্যা শ্রেয়সী দাস।
এর পর শুরু হয় মূল আকর্ষন দ্রৌপদী ফেনমেনন- ব্যাকসীনে অগ্নীকুন্ডু এবং তার সাথে সঙ্গত করা অন্য সকল নৃত্যশিল্পীদের আগুনরাঙা পোষাকে দ্রৌপদীর জন্ম যে যজ্ঞবেদী থেকে তার যে মঞ্চায়ন ছিল এক কথায় অনন্য, অন্যবদ্য।এই নৃত্যনাট্যের অংশে আরো ছিল মূল চরিত্র দ্রৌপদীর শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধনুবিদ্যা, যুদ্ধশাস্ত্র, দান বস্ত্রহরন ও শ্রীকৃষ্ণের আশির্বাদ প্রাপ্তি সম্পর্কীয় দারুন ও উপভোগ্য উপস্থাপনা।এছাড়াও এর মূল বিষয় শিক্ষা সৌন্দর্য এবং শক্তির প্রতীক দ্রৌপদীর পঞ্চপান্ডবের সাথে বিবাহ এবং তাঁর পরবর্তী জীবনে যে লাঞ্ছনার শিকার তিনি হয়েছেন এবং কিন্তু তিনি তার মর্যাদায় দৃঢ় ছিলেন এবং ভরা রাজসভায় প্রতিবাদ জানানো সাহসিকতা দ্রৌপদী চরিত্রের এক উজ্জল দিক তার সবটুকুই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তার নৃত্য উপস্থাপনায়।
দ্রৌপদীর বলিষ্ঠ প্রতিবাদ, তাঁর ভাষার ওজস্বিতা, রাজ্যসভায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে সুতীক্ষ্ণ ভাষায় সভাসদদের সমালোচনা তাঁকে বিশ্বের দরবারে নারীজাতির আদর্শ স্থানে স্থাপন করেছে। নারীপ্রগতীর তিনিই অগ্রদূতী। তাঁরই আদর্শে উদ্বুদ্ধ ভারতে অজস্র নারী মাথা তুলে দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন।
দ্রৌপদী নারী স্বাধীনতার প্রতীক, নারীপ্রগতির উজ্জল দৃষ্টান্ত।আর দ্রৌপদী উপাখ্যানের প্রতিটি অংশ দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে দ্রৌপদীর নাম ভূমিকায় এবং কোরিওগ্রাফীতে গুরু সঞ্চিতা ভট্টচার্য্য। সহযোগী নৃত্যে ছিলেন নটরাজ ড্যান্স একাডেমীর কর্নধার শ্রেয়সী দাস ও মিতা দে এবং নটরাজ ড্যান্স একাডেমীর শিক্ষার্থীরা।
তারা হলেন পদ্মজা সরকার, প্রিয়াঙ্কা কুমার দাস, সঞ্চারী মান্না, তরুণীমা গুহ, স্বাগতা চাটার্জী, অনন্যা জানা, মিতা দে, লাবণ্য স্নেহা, লিবনি ভৌমিক, মঞ্জরী মন, রেমো, জল, ওম, অমি ও দিনা। এছাড়াও কৃষ্ণ’র ভূমিকায় ছিলেন সৌমিক ঘোষ, আর অর্জুনের ভূমিকায় সন্দীপ কাঞ্জিলাল।
শব্দ নিয়ন্ত্রনে ছিলেন সৌমাভা ভট্টাচার্য্য , আলোক নিয়ন্ত্রনে ছিলেন রাহুল গাঙ্গুলী।
উক্ত অনুষ্ঠানে আরো ছিল অভিনেতা সৌমিক ঘোষের একক অভিনীত নাটিকা “বরদা বরদা “ এবং ওডিশি নৃত্যে কর্মশালায় অংশগ্রহনকারী সকলকে সার্টিফিকেট প্রদান এবং বাঙালি কমিউনিটির ৭জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে গেষ্ট ওফ অনার সম্মাননা প্রদান।
অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হলে ছিল পীন পতন নীরবতা, কারন দর্শক চোখের পলক না ফেলে উপভোগ করেছে দারুন এই পরিবেশনা।অনুষ্ঠান শেষে সকলের মুখেই ছিল প্রশংসার বানী। দ্রৌপদী মহাভারতের মহান কাহিনীর নান্দনিক উপস্থাপন সিডনির মঞ্চে এই প্রথম হলেও গুরু সঞ্চিতা ভট্টচার্য্য বিশ্বের বেশ কয়েকটি শহরে এর মঞ্চায়ন করেছেন বহুবার ।
Leave a Reply