মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২২ অপরাহ্ন

তহবিল সংকটে বন্ধ হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশু শিক্ষা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪০ Time View

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা নিয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। দাতাগোষ্ঠীর সহায়তা কমে যাওয়ায় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পগুলোর শিশুদের পড়াশোনার বেহাল চিত্র তুলে ধরে ইউনিসেফ।

ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ারস বলেন, কক্সবাজারের ৩৪টি শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ১৮ বছরের নিচে শিশু রয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ জন (৩১ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত)। গত আট বছরে গড়ে অন্তত ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। নতুন প্রজন্ম বাড়লেও শিক্ষার ভবিষ্যৎ ক্রমেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।

তিনি জানান, একসময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪ হাজার ১০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু ছিল। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯২টি ছিল লার্নিং সেন্টার। কিন্তু তহবিল সংকট ও নানা জটিলতার কারণে ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭২৪টি লার্নিং সেন্টারও রয়েছে।

এ অবস্থায় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার শিশু কেজি থেকে গ্রেড-৪ পর্যায়ের বাইরে চলে গেছে। ফলে অনেকে পড়ালেখা ছেড়ে শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে ও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তবে সংকটের মাঝেও প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার শিশু এখনো শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে, যার ৭৫ শতাংশই ইউনিসেফ-সমর্থিত লার্নিং সেন্টারে পড়াশোনা করছে।

তহবিল সংকটের কারণে ১ হাজার ১৭৯ জন হোস্ট কমিউনিটি টিচিং ভলান্টিয়ার চাকরি হারিয়েছেন। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩৭০ জন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন, তবে তারাও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

রানা ফ্লাওয়ারস বলেন, চাকরি হারানো শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমে ইউনিসেফ কর্মীদের হুমকি দিয়েছেন। ক্যাম্পে তাদের গাড়ি চলাচলেও বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ‘চাকরি ফিরিয়ে না দিলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে’- এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এতে শুধু শিক্ষা নয়, অন্যান্য মানবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ইউনিসেফে কাজ করছি। তবে এবারের মতো ভয়াবহ ফান্ড ক্রাইসিস আমি আগে দেখিনি।’

বর্তমানে ক্যাম্পে ৩ হাজার ৮৭৩ জন রোহিঙ্গা টিচিং ভলান্টিয়ার কাজ করছেন। তবে তাদের অনেকে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না বলেও ইউনিসেফ জানিয়েছে।

রানা ফ্লাওয়ারস বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে- বিশেষ করে ফিলিস্তিন, ইউক্রেন ও সোমালিয়ার মতো সংঘাতকবলিত এলাকায় মানবিক সহায়তার প্রয়োজন বেড়ে গেছে। এজন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে ফান্ড ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। তবুও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য তহবিল বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হলে পুরো একটি প্রজন্ম অশিক্ষিত হয়ে বেড়ে উঠবে। এর প্রভাব শুধু ক্যাম্প নয়, পুরো অঞ্চলের ওপর পড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফ কক্সবাজার আঞ্চলিক অফিসের প্রধান অ্যাঞ্জেলা কার্নেও উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category