বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন

কানাডায় স্টার্জিয়ন লেকে নৌকাডুবি: দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিজিএমইএ নেতা ও বাংলাদেশি পাইলটের মর্মান্তিক মৃত্যু

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
  • ৩৭০ Time View

কানাডার অন্টারিও প্রদেশের স্টার্জিয়ন লেকে এক মর্মান্তিক নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের একজন শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভিজ্ঞ এক পাইলট। রবিবার (স্থানীয় সময়) দুপুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতদের একজন হলেন আবদুল্লাহিল রাকিব, যিনি বিজিএমইএ-এর বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং টীম গ্রুপ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। অপরজন ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান গুড্ডু, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

রবিবার দুপুর তিনটার দিকে তারা স্টার্জিয়ন লেকে একটি ছোট মোটরচালিত নৌকায় করে ঘুরতে বের হন। নৌকাটিতে আবদুল্লাহিল রাকিব রাকিবের ছেলে ও সাইফুজ্জামান গুড্ডু এই তিনজন ছিলেন বলে জানা গেছে। হঠাৎ নৌকাটি ভারসাম্য হারিয়ে উল্টে যায়। রাকিবের ছেলে সাঁতরে তীরে উঠলেও রাকিব ও গুড্ডু পানিতে ডুবে যান। উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, অতিরিক্ত গতি ও হঠাৎ ঢেউ নৌকাডুবির অন্যতম কারণ হতে পারে। আবহাওয়া সে সময় শান্ত থাকলেও পানির স্রোত হঠাৎ তীব্র হয়ে ওঠে। পুরো ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত এখনো চলছে।

আবদুল্লাহিল রাকিব দেশের তৈরি পোশাক খাতের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। টীম গ্রুপ -এর নেতৃত্বে তিনি দেশের গার্মেন্ট খাতে সবুজ ও টেকসই উৎপাদনের অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠান দেশের অন্যতম পরিবেশবান্ধব কারখানা পরিচালনা করে আসছিল এবং ২০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

অপরদিকে, ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান গুড্ডু ছিলেন একজন নির্ভরযোগ্য বৈমানিক এবং প্রবাসে জনপ্রিয় সামাজিক মুখ। ড্যাশ-৮ ও বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে তার ৭,০০০ ঘণ্টার বেশি উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা ছিল। ছুটি কাটাতে সম্প্রতি তিনি কানাডা গিয়েছিলেন, যেখানে তার মেয়ে বর্তমানে পড়াশোনা করছেন।

এই দুর্ঘটনায় কানাডা ও বাংলাদেশের প্রবাসী কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিজিএমইএ, টীম গ্রুপ , বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং টরন্টোর বিভিন্ন সংগঠন এই দুই গুণী ব্যক্তির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশন কানাডা ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় নিহতদের মরদেহ দ্রুত দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে টরন্টোর ড্যানফোর্থ এলাকায় একটি স্মরণানুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নিতে পারবেন।

এই দুই মানুষের মৃত্যু শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁরা প্রমাণ করে গেছেন, বিদেশে থেকেও বাংলাদেশের জন্য অসামান্য অবদান রাখা যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category