গ্রামীণফোন লিমিটেড, রবি আজিয়াটা লিমিটেড এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডকে ইউনিফাইড লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
ডাক ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সোমবার (১১ মার্চ) এই তিন অপারেটরকে আনুষ্ঠানিকভাবে লাইসেন্স তুলে দেন। তবে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম অপারেটর বাংলালিংককে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।
ইউনিফায়েড লাইসেন্সের মেয়াদ ১৫ বছর, যা দিয়ে ৫জিসহ সকল প্রকার ওয়্যারলেস মোবাইল সেবা দিতে পারবে মোবাইল অপারেটরেরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অডিট আপত্তিতে বাংলালিংকের কাছে বিটিআরসি পাওনা টাকা পুরোপুরি পরিশোধ না করায় আজ বাংলালিংককে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। সূত্র জানায়, অডিট আপত্তিতে বাংলালিংকের কাছে বিটিআরসির মোট পাওনা ৮২৩ কোটি ৫ লাখ ৬ হাজার ১৫৫ টাকা। এর মধ্যে বিটিআরসির পাওনা ৮১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা ৩৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
লেট ফি ও ইন্টারেস্টের পরিমাণ হলো ৪৩০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ছাড় দেওয়ার বাংলালিংকের আবেদন বিশেষ বিবেচনা করছে বিটিআরসি। অপারেটরটি এরই মধ্যে ৩১৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। আজ সোমবার আরও ১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বলে জানা গেছে। এর ফলে এখন মূল টাকার ৪৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বিটিআরসির। অডিট আপত্তিতে বাংলালিংকের কাছে পাওনা দাবির লেট ফির টাকা মওকুফে সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে বিটিআরসি।
আগের ২জি, ৩জি, ৪জি প্রযুক্তি এবং তরঙ্গ ফি এর জন্য আলাদা লাইসেন্স এবং নির্দেশিকা পরিবর্তে সব বিষয়কে এক লাইসেন্সের আওতায় আনা হয়েছে। একীভূত লাইসেন্সে ৫জি ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অ্যাকসেস তরঙ্গের প্রাপ্যতা ও ব্যাকহল ফাইবারের পাশাপাশি পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবহারের অনুমতি, অফশোর ক্লাউড সুবিধা, রোল আউট বাধ্যবাধকতা, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা প্রভৃতি বিবেচনায় নেওয়া হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক ও প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) এবং অধিক নির্ভরযোগ্য ও নিম্নতর বিলম্বের নেটওয়ার্ক তৈরির ধারণাগুলোর প্রায়োগিক দিকসমূহ বিবেচনায় নিয়ে বহুমুখী সেবার বাণিজ্যিক বাস্তবায়নে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশেও ৫জি প্রযুক্তির সেবা প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে ২.৩ গিগাহার্জ, ২.৬ গিগাহার্জ ও ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড ৩টি নির্বাচন করেছে। ২০২২ সালের মার্চে ২.৩ গিগাহার্জ ব্যান্ড হতে ৭০.০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ এবং ২.৬ গিগাহার্জ ব্যান্ড হতে ১২০.০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ ৪টি মোবাইল অপারেটরের অনুকূলে নিলামের মাধ্যমে বরাদ্দ প্রদান করা হয়, যা বর্তমানে ৪জি সেবা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ২জি লাইসেন্স নামে বাণিজ্যিকভিত্তিতে সেলুলার মোবাইল সেবা সংক্রান্ত লাইসেন্স প্রদান করা হয়, যা ২০১১ সালে ১৫ বছরের জন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত নবায়ন প্রদান করা হয়। ২০১৩ সালে চার মোবাইল অপারেটরকে ২০২৮ সাল মেয়াদ পর্যন্ত ৩জি লাইসেন্স প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত চার অপারেটরে অনুকূলে ৪জি লাইসেন্স প্রদান করা হয়। বর্তমানে উক্ত লাইসেন্স সমূহের আওতায় দেশে সেলুলার মোবাইল সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
৫জি এবং পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল সেবা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইউনিফায়েড লাইসেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ পর্যাপ্ত তরঙ্গ ও একসেস ফ্রিকোয়েন্সি সহজলভ্য হয় সে লক্ষ্যে বিটিআরসি কাজ করছে।
লাইসেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন ও তিন অপারেটরের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply